লোভের টোপ পরিহারে প্রয়োজন সচেতনতা

 

চকচকে পদার্থের তৈরি রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি নিয়ে গোপনে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া একটি চক্রের মুখোশ খুলেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। চক্রে জেলা পরিষদে চাকরি করা এক ব্যক্তিও রয়েছেন। তাকে কী অসচেতন বলা যায়? বোকা নাকি অর্থের লোভে অন্ধ হয়ে তিনি ওই চক্রভুক্ত? সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন।

মাঝে মাঝেই সঙ্ঘবদ্ধ অর্থলিপ্সুদের অপতৎপরতা বেড়ে যায়। কখনো হুতুম প্যাঁচা, কখনো বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তির মৃতদেহও হয়ে ওঠে প্রতারকচক্রের গোপন অর্থবাণিজ্যের উপকরণ। মূল্যবান পদার্থের খোঁজ করতে গিয়ে সীমান্ত সীমানা চিহ্নের খুঁটিগুলোও গিলে খেয়েছে অর্থলিপ্সু সঙ্ঘবদ্ধরা। মূর্তি নিয়ে প্রতারণা? নতুন নয়। মাটির তৈরি মূর্তিতে কালো রঙ করেও কষ্টিপাথরের মূর্তি বলে যেমন প্রতারণার ফাঁদ পাতার উদাহরণ রয়েছে, তেমনই কাঁসার তৈরি মূর্তি পালিশ ঘষে চকচকে করে স্বর্ণের মূর্তি বলে গোপনে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদও এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত নয়। মোবাইলফোনে জিনের বাদশা সেজে স্বর্ণরঙের মাটির মূর্তি দিয়েও অর্থ হাতিয়ে নিয়ে অনেকেরই সর্বস্বান্ত করেছে প্রতারক। লটারির কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া? অর্থলোভীদের অনেকে মাঝে মাঝেই তো এ প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে টাকা হারিয়ে হা-হুতাশ করেন। লজ্জায় না পারেন প্রকাশ করতে, না পারেন প্রতারিত হওয়ার বিষ তথা টাকা হারানোর মনোকষ্ট সহ্য করতে। আর প্রতারকচক্রভুক্ত হয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে হাজতবাস? এ রকম মানুষের তালিকা তো বাড়ছেই। কমবে কবে? যেদিন সচেতনতার আলো সকলকে সজাগ করে লোভ পরিহার শেখাবে, সেদিন। ওইদিন আসতে আর কতোদিন? যতোদিন সমাজের সচেতন মানুষগুলো সমাজের সকলকে সচেতন করতে দায়িত্বশীল না হবেন ততোদিন। প্রতারকচক্রের সকলেই যে চালাক তাও কিন্তু নয়। অনেকেই লোভে পড়ে চক্রভুক্ত হয়ে নিজেও অর্থ হারিয়ে হায় হায় করেন। অনেকে অল্প অর্থে কিনে রাতারাতি অর্থশালী হওয়ার আশায় খদ্দের খুঁজতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। খদ্দের খোঁজার সুযোগে পূর্বে গচিয়ে দেয়া প্রতারক নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে অনেক সময় পুলিশের গোপন সংবাদদাতাও সেজে বসেন। সে কারণে স্থান কাল পাত্র বিবেচনা সকল ক্ষেত্রেই গুরুত্ব বহন করে।

অধিকাংশ প্রতারকেরই মূল পুঁজি বিশ্বাস স্থাপনের মতো চাটুকারিতা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওরাই প্রতারিত হন যারা অস্বাভাবিক লোভ পরিহার করতে পারেন না। লোভ পরিহার এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন। কোনটি বেআইনি, কোনটি লোভের টোপ তা বুঝে শুনেই পা বাড়ানো উচিত।