লাইলাতুল কদর : হাজার মাসের সেরা রাত

পবিত্র কোরআনে ‘কদর’ নামে স্বতন্ত্র একটি সুরা নাজিল করে আল্লাহতায়ালা শবেকদর বা লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব অল্প কথায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। এতে আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘আমি একে (আল-কোরআন) নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। লাইলাতুল কদর সম্বন্ধে আপনি কি জানেন? লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ সাধারণত ২৬ রমজান দিবাগত রাতকে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা মর্যাদাবান রজনী বলে বিবেচনা করা হয়। কদরের শাব্দিক অর্থই হলো মর্যাদা ও মাহাত্ম্য।

বিখ্যাত ইসলামিক মনীষী আবু বকর ওরবাক (রা) বলেন, এ রাতের ইবাদত-বন্দেগীর কল্যাণে একজন নগণ্য মানুষও আল্লাহর দৃষ্টিতে মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হতে পারে। কদরের আরেক অর্থ হলো তকদির ও হুকুম। হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর বর্ণনামতে, শবেবরাতে আল্লাহ এক বছরের জন্য বান্দার রুজি-রিজিক, হায়াত-মউত ও অন্যান্য তকদীরী ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, আর শবেকদরে সে সকল সিদ্ধান্তের প্রয়োগ ও রুটি-রিজিক প্রভৃতি সরবাহের দায়িত্ব আল্লাহ ফেরেশতাদের দিয়ে দেন (কুরতুবি)। মুহাদ্দিস ইবনে আবি হাতেম (রহ.) ইমাম মুজাহিদ (রহ.) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসুলল্লাহ (স.) একদিন সাহাবায়ে কিরামদের বৈঠকে বনি ইসরাইলের এক মুজাদ্দিদের কথা উল্লেখ করেন। তিনি এক হাজার মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে আল্লাহর সাধনায় লিপ্ত ছিলেন। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কিরামের আফসোস হয় যে, এক হাজার মাস অর্থাৎ তিরাশি বছর চার মাস তো-এ যুগের অনেকে জীবনও পায় না। তাই হযরত মূসা (আ.)-এর উম্মত বনি ইসরাইলের মতো এতো অধিক সাওয়াব লাভের অবকাশও উম্মতে মুহাম্মদীর (স.) নেই। সাহাবায়ে কিরামের এ আফসোস-অনুশোচনাকালে হযরত জিবরাইল (আ.) আল্লাহর পক্ষ হতে কুরআন মজিদের সূরা কদর নিয়ে হুজুর (স.)-এর কাছে আগমন করেন।

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রজনীতে শবেকদর নিহিত। তাহলে আমরা রমজানের ২৬তম দিবাগত রাত কেন শবেকদর পালনে এতো ব্যস্ত হয়ে পড়ি? এ প্রশ্নের জবাবের আগে শবেকদর এমন উহ্য রাখার হেতু সম্পর্কে আলোকপাত করা প্রয়োজন। শবেকদরকে গোপন রাখার মধ্যে রয়েছে আল্লাহতায়ালার বিরাট হিকমত ও রহস্য। প্রত্যেক মূল্যবান বস্তু হাছিল করা যেমন কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তেমনি আল্লাহর উদ্দেশ্য হলো এ মহামূল্যবান রাতের অনুসন্ধানে বান্দাগণ সাধনা করুক, এক রাতের জন্য ৩০টি রাত জাগ্রত থাকুক। ওলামায়ে কিরামগণ শবেকদরের গোপনীয়তার আরেকটি রহস্য এভাবে ব্যক্ত করেন যে, শবেকদর যদি নির্দিষ্ট রাতে অনুষ্ঠিত হতো এবং তা মানুষের জানা থাকতো, তবে অনেক অলস ও গাফেল হতভাগ্য ব্যক্তি এমন একটি মহান রাতের মর্যাদা না দিয়ে আল্লাহর গজবে পতিত হতো। এ জন্য উচিত হলো শেষ দশকের প্রতি বিজোড় রাতে জাগ্রত থেকে কিছু জিকির-আজকার, তসবিহ-তাহলিল, তেলাওয়াত, নফল নামাজ প্রভৃতির মাধ্যমে শবেকদরের ফজিলত অর্জনের চেষ্টা করা।

বুখারি ও মুসলিম শরিফের হাদিসে বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি শবেকদরে দণ্ডায়মান থাকে অর্থাৎ ইবাদত করে রাত জাগরণ করে তার অতীত গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তাই শবেকদরের ইবাদত মানবজীবনের পাপমুক্তি ও আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য অপরিসীম কল্যাণকর। শবেকদরের ইবাদতের মধ্যে রয়েছে- নফল নামাজ আদায় করা, কোরআন তেলাওয়াত করা, জিকির-আজকার করা, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা, দরুদ শরিফ বেশি পরিমাণে পড়া, দান-সদকা করা ইত্যাদি।

এছাড়া রাসুল করিম (স.) বলেছেন, যখন তোমরা লাইলাতুল কদরের সন্ধান পাবে, তখন এ দোয়াটি পাঠ করবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি-হে আল্লাহ তুমি অবশ্যই ক্ষমাশীল। তুমি ক্ষমা করাকে পছন্দ করো, কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করো’ (তিরমিযি)।