রোগ গোপন করার চেয়ে দরকার দ্রুত সঠিক দাওয়ায়

শরীরের কোনো রোগ গোপন করে বা পুষে রাখা মানে বড় ধরনের সর্বনাশ ডেকে আনা। একইভাবে সমাজের কোনো সমস্যা গোপন করার পরিণামও ভয়াবহ। শরীরের কোনো অঙ্গ গোপন করা সভ্যতারই অংশ, রোগ গোপন করার অপরণাম অন্ধত্ব। সমাজের ক্ষেত্রেও খানেকটা তাই নয়কি? ফলে সমস্যা গোপন করার বদলে সমস্যার গভীরে তথা কারণ খুঁজে মূল উৎপাটনই সুন্দর সমাজ গঠনের পথকে সুগম করে। অন্যথায় অকল্যাণই ডেকে আনে। সমাজকে দিতে হয় বড় ধরনের খেসারত। সেটা কারোর কাম্য নয়।
চুয়াডাঙ্গায় সম্প্রতি চুরি-ডাকাতি ছিনতাই বেড়েছে। ছড়িয়েছে আতঙ্ক। আতঙ্কগ্রস্ততা থেকে অবশ্য সতর্কতার তাগিদও বেড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পালাক্রমে রাত জেগে পাহারার ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। যদিও মতলববাজ কোনো চক্র নানা প্রকার গুজব ছড়িয়ে হয়তো অজ্ঞাত সুযোগ খুঁজছে। তাই বলে ডাকাতি, ছিনতাই রাহাজানি চুরি কিংবা কোনো কিশোরীর বাড়ির উঠোনে অজ্ঞাত পরিচয়ের পুরুষের অনাকাক্সিক্ষত অবস্থানের কারণে মহল্লাজুড়ে তটস্থ হওয়ার ঘটনাটি গোপন করে সমাধান প্রত্যাশা করা যায়? সেটা সঙ্গতও নয়। পুলিশি তৎপরতাই মূলত সমাজে স্বস্তি ফেরানোর মূলমন্ত্র। সেটা দায়িত্বশীলদের কর্ত্যবরই অংশ। একই সাথে এলাকার সচেতন মহলেরও বাড়তি দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন। কোনটি সঠিক, কোনটি গুজব- কখন কি করতে হবে, তা বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারার দায় সমাজপতিদের ওপরই বর্তায়। কেননা, একজন চিকিৎসকের ভুলে বা উদাসীনতায় একজন রোগীর মৃত্যু হতে পারে, কিন্তু সমাজপতি বা নেতা তথা সমাজের ডাক্তারদের একটি ভুলে পুরো সমাজেই পঁচন ধরতে পারে। ধরেও, তার দাওয়ায়ও দিতে হয় সমাজপতিদেরই। এর আগে হয়ে যাওয়া খতির ক্ষতচিহ্ন সমাজের ললাটে দগদগে হয়ে থাকে। অপরাধ, গুজব, হুঁচুকের প্রেক্ষিতে সঙ্গত প্রশ্ন, চুয়াডাঙ্গা কি সেই খতির পথেই হাঁটছে?
শুধু অপরাধীদের অপতৎপরতা বৃদ্ধিই নয়, চুয়াডাঙ্গায় পুলিশি তৎপরতাও বেড়েছে। এরপরও অস্বস্তি বিরাজ করার আড়ালে গুজবে কান দিয়ে হুঁচুকে মেতে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের বদলে সেলফোনে বানোয়াট খবর ছড়ানো বহুলাংশে দায়ী। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ছড়ানো গুজবে সৃষ্ট অস্থিরতায় শীতলতার ছোঁয়া এনে দিচ্ছে মূলত প্রভাতে ছড়ানো সঠিক খবরে ভরা গণমাধ্যম। ‘সঠিক সংবাদ’ সমাজের সুচিকিৎসার তাগিদই শুধু দেয় না, রোগ নির্ণয়ে সহায়তাও করে। পরিবেশ পরিস্থিতিও এনে দেয় অনুকূলে।