রেল যোগাযোগ ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে

ব্র্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দভাগ রেলস্টেশনে দুই ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনাটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার পর্যায়ে পড়ে। সোমবার রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন তূর্ণা নিশীথা সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর ট্রেন উদয়ন এক্সপ্রেসের মাঝামাঝি বগিতে আঘাত করলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ১৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের সিগন্যাল অমান্য করাকে দায়ী করা হয়েছে। তূর্ণা নিশীথা শশীদল স্টেশন অতিক্রম করে মন্দভাগ স্টেশনের দিকে যাত্রা করার পর ট্রেনটিকে আউটারে থামার সংকেত দেয়া হয়। আর উদয়ন এক্সপ্রেস কসবা স্টেশন ছেড়ে মন্দভাগ স্টেশনে প্রবেশ করার পথে ট্রেনটিকে মেইন লাইন ছেড়ে ১ নম্বর লাইনে আসার সংকেত দেয়া হয়। উদয়নের ছয়টি বগি প্রধান লাইনে থাকতেই তূর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করে ভুল লাইনে গিয়ে উদয়নের মাঝামাঝি আঘাত হানে। এতে ট্রেনটির তিনটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। তূর্ণা নিশীথার চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার বিস্তারিত তদন্তে রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ঘন ঘন ট্রেন দুর্ঘটনা রেলযাত্রীদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছরের জুনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন উপবন এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত হয়ে ৭জন প্রাণ হারান। এর আগে গত বছরের এপ্রিলে টঙ্গীতে ঢাকাগামী জামালপুর কমিউটার ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনায় প্রাণ হারান ৪জন। ট্রেনকে তুলনামূলক নিরাপদ বাহন হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু ঘন ঘন দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে ট্রেন ভ্রমণে মানুষের সেই নিরাপত্তাবোধে যে চিড় ধরবে, তা বলাই বাহুল্য। কাজেই দুর্ঘটনার কারণগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করে অবিলম্বে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া দরকার। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় বটে, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব কমিটির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে না। রিপোর্ট প্রকাশ করা হলেও এর সুপারিশগুলো কমই আমলে নেয়া হয়। রেলযাত্রাকে প্রকৃতই নিরাপদ করতে চাইলে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। দেশে অধিকাংশ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে চালক, গার্ড, স্টেশন মাস্টারসহ সংশ্লিষ্টদের ভুলের কারণে। মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানোর কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। লাইনের সংস্কার সময়মতো করা হয় কিনা, তা নিয়েও রয়েছে বড় ধরনের প্রশ্ন। লাইনে পাথর না থাকা, সিগন্যাল ব্যবস্থার ত্রুটি, লাইন ক্ষয়, স্লিপার নষ্ট, লাইন ও স্লিপার সংযোগস্থলে লোহার হুক না থাকা ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। কাজেই এসব দিকে নজর দেয়া দরকার জরুরি ভিত্তিতে। মনে রাখা দরকার, একেকটি ট্রেন দুর্ঘটনায় জানমাল তো বটেই, রেলওয়েরও ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর। ট্রেন চালাতে চালক (লোকোমাস্টার), স্টেশন মাস্টার, গার্ড (পরিচালক), পয়েন্টসম্যান- এ চারটি পদ খুবই জরুরি। এর কোনো একটিতে দক্ষতার ঘাটতি থাকলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। সংশ্লিষ্টদের মতে, রেলওয়ের নিয়মানুযায়ী প্রতিদিন তিনবার পর্যায়ক্রমে পুরো লাইন, সিগন্যাল ও ব্রিজ পরিদর্শন করার কথা। একইসঙ্গে প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার আগে ইঞ্জিন ও বগিগুলোর বিশেষ বিশেষ যন্ত্রাংশ ও চাকা পরীক্ষা করার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। তাই আমরা জোরের সঙ্গে বলতে চাই, রেলওয়েতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল নিয়োগ দিয়ে, রেললাইনগুলোর সংস্কার করে এবং নতুন ইঞ্জিন যুক্ত করে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করা হোক।