রেলওয়ে বিভাগকে বাঁচাতে রেল ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি

 

চলন্ত ট্রেনের নারী যাত্রীদের ভ্যানিটি ব্যাগ বা গায়ে থাকা গয়না ছিনিয়ে নিয়ে পালানো ছিনতাইকারীরাও ভিনগ্রহের বাসিন্দা নয়। ওরা উড়েও আসে না। স্টেশনের প্লাটফরমের ছদ্মবেশে ঘোরে। ট্রেন স্টেশন ত্যাগ করছে দেখে সুযোগ বুঝে নারী যাত্রীর হাত থেকে ব্যাগ বা অন্য কোনো মূল্যবান মালামাল ছিনিয়ে নেয়। ছিনতাইকারীর পালানোর দৃশ্য চলন্ত ট্রেনের যাত্রীদের দেখা ছাড়া গত্যন্তর না থাকলেও স্টেশনে থাকা সাধারণ মানুষ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা কর্মীদের নিশ্চয় নিরব দর্শক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাটা অন্যায়। সে কারণে ছিনতাইকারী ধরেই শুধু নয়, ছিনতাইকারীকে পালাতে সহায়তাকারী নিরাপত্তাকর্মীদেরও উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা দরকার।

কতো কিছুই তো কতোজনের করা উচিতৎ। কোনো উচিত কাজটি ক’জন কর্তা করছেন? কেন করছেন না? কর্তাদের কাছে দায় এড়ানোর যেমন অজুহাত আছে, তেমনই আমজনতার মুখেও কর্তাদের কুম্ভুঘুম নিয়ে উচ্চারিত হয় নানা মন্তব্য। যে কর্তা অর্থকড়ির ভাগ পান বা নেন তাকে তো কর্তব্যপালনে উদাসীন হতেই হয়! তাদের কাছেই থাকে ভুরি ভুরি অজুহাত, যুক্তি। সে অজুহাত যতোই অগ্রহণযোগ্য হোক, সে যুক্তি যতোই খোড়া হোক দায় এড়ানোর ফাঁকফোকড় রয়েছে বলেই যে সর্বক্ষেত্রে যাচ্ছে তাই অবস্থা ফুটে উঠছে। যদিও কোনো অনিয়মই একদিনে ব্যাপকতা পায় না, একদিনে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায় না। সময় লাগে। যেখানে জবাবদিহিতায় যতোটা ঘাটতি সেখানে অনিয়মটাও ততো বেশি। বাংলাদেশ রেলওয়ের চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে সেই অনিয়মটা বোধহয় একটু বেশি। নিরাপত্তা প্রশ্নে এটা অস্বীকার করবেন কীভাবে? লোকবল অপ্রতুল? বিষয়টি কি স্থানীয় পরিচালনা কমিটির কর্তাকে জানানো হয়েছে? প্রতিবেশী দেশে যখন গ্রামে গ্রামে রেললাইন স্থাপনের মধ্যদিয়ে যোগাযোগ খরচ সাশ্রয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থপন করে চলেছে, তখন আমাদের দেশের রেলওয়ে বিভাগটাই হুমকির মুখে। দুর্নীতি লুটপাট অনিয়ম দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই অন্যতম কারণ।

এইতো সেদিন চলন্ত ট্রেন থেকে এক নারী যাত্রীর ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর সময় আমজনতা ধরে জিআরপি ফাঁড়িতে দিলো। এরপরও কি ফাঁড়ি কর্তার নড়েচড়ে বসা উচিত ছিলো না? নড়ে চড়ে বসলে নিশ্চয় চুয়াডাঙ্গা স্টেশনে চলন্ত ট্রেন থেকে নারী যাত্রীর গায়ে থাকা গয়না বা অন্য কিছু ছিনিয়ে নেয়ার মতো ঘটনা ঘটতো না। রেলভ্রমণকারীদের এ ধরনের ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া মানে রেলওয়ের অগ্রযাত্রার ওপর ভয়ানক আঘাত। ভ্রমণকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্যদিয়েই রেলওয়ে বিভাগের উন্নয়ন প্রত্যাশা করা সম্ভব। অন্যথায় ভ্রমণকারীর অভাবে লোকাসানের বোঝা বেড়ে বন্ধ হয়ে যাবে রেলের চাকা।