রাজনীতিতে শুদ্ধতার চর্চা জরুরি

 

দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে নতুন নয়। নওয়াজ শরিফও দুর্নীতির কারণে ফেঁসে গেলেন। তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হলেন পিএমএল-এনের এ নেতা। পানামা পেপারস মামলার রায়ে সে দেশের উচ্চ আদালত সম্প্রতি তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করলেন, তিনি ইস্তফা দেন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে। শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন, দেশটির অর্থমন্ত্রী ইসহাক দারকেও দায়িত্বে থাকার অযোগ্য ঘোষণা করেছেন সুপ্রিমকোর্ট। পাকিস্তানের ৭০ বছরের ইতিহাসে পূর্বতন কোনো প্রধানমন্ত্রী তার নির্দিষ্ট মেয়াদকাল ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। নওয়াজ শরিফও পূর্বতনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হলো। ফলে সে দেশে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সরকার চালিয়ে নেয়ার দায়িত্ব কার ওপর বর্তাবে সে বিষয়টিও এখন আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সুতরাং এ ঘটনা যে তার রাজনৈতিক পতন, তা বলা যেতেই পারে। নওয়াজের ঘনিষ্ঠজনরা এ ঘটনা নওয়াজকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র বললেও তা কতোটুকু যৌক্তিক- রায়ের পর এমন প্রশ্নও অমূলক নয়। তবে এ ঘটনায় শাসকদলে হতাশা নেমে এসেছে আর বিরোধীরা উল্লাসে মেতেছে। এ রায়ে আদালত ফৌজদারি তদন্ত শুরু করারও নির্দেশ দিয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে নওয়াজ শরিফের পিএমএল-এনের সমর্থকের সংখ্যা কমে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা। ঘটনাবহুল পাকিস্তানের রাজনীতি থেকে দুর্নীতির বিলোপ না ঘটা পর্যন্ত সে দেশের গণমানুষের প্রকৃত উন্নয়ন যেমন সম্ভব নয়, তেমনিভাবে দেশে থেকে সন্ত্রাসবাদের পতন ঘটানোও অসম্ভব বলে মনে করেন রাজনৈতিক বোদ্ধারা। সম্প্রতি ঘটনার পর দেশটিতে সামরিক শাসক আসতে পারে, এমন আশঙ্কারও যৌক্তিকতা রয়েছে।

সর্বোপরি, দুর্নীতি করে যে ক্ষমতায় টিকে থাকা অসম্ভব তা আবারও প্রমাণিত হলো পাকিস্তানের আদালতের সম্প্রতি এ রায়ে। এ ঘটনাকে শিক্ষণীয় হিসেবে নিয়ে, রাজনীতিতে শুদ্ধতার চর্চা ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ হলে তা সবার জন্যই সুখকর হতে পারে। দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এসবে কখনো সাধারণ মানুষের কল্যাণ নিহিত নেই, এটা রাজনীতিকরা যতো তাড়াতাড়ি উপলব্ধি করবেন ততোই তা সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।