রাকিবের করুণ পরিণতি বয়ে আনুক সুন্দর সমাজ

 

নাম রাকিব। বয়স আর কতোই হবে। টেনেটুনে হয়তো তিরিশ। তার গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ দেখে দুঃখ প্রকাশ বা হাপিত্যেস দূরের কথা, সন্তোষ প্রকাশের মধ্যদিয়ে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে তা হলো- ঘৃণা। পরশু যখন লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গের সামনে তখনও তার প্রতি ঘৃণা জানাতে হাজির হয় স্কুলছাত্র সজিবের সহপাঠীদের অনেকে। দামুড়হুদায় মিষ্টিমুখই শুধু হয়নি, উল্লাসও হয়েছে।

রাকিবুল ইসলাম রাকিব চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের আলুকদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য ছিলো। সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলো। ইউপি নির্বাচনের সময় তার হুঙ্কারে অন্য প্রার্থীরা ঠিকমতো ভোট চাইতেই নাকি পারেননি। গুরুতর এসব অভিযোগ অবশ্য নির্বাচনের সময় তোলেননি কেউ। যদিও পুলিশের দস্তাবেজে রাকিবের নাম বহু আগেই উঠেছে। তারপরও তার বিরুদ্ধে তেমন শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, হলে নিশ্চয় চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র সজিবকে তার নৃশংসতার শিকার হতে হতো না। খালি হতো না সজিবের মায়ের বুক। বোনকে হারাতে হতো না তার আদরের ছোট ভাইকে। সজিব দামুড়হুদা উপজেলা শহরের ব্রিজ মোড়ের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে। চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলো। তাকে তারই এক বন্ধুকে দিয়ে কৌশলে ডেকে নেয়া হয় ওই রাকিবের চুয়াডাঙ্গা সিঅ্যান্ডবিপাড়াস্থ কথিত চার্জার লাইট কারখানায়। সেখানেই একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরকচক্র। যদিও অপহরণের বিষয়টি অনেকের মধ্যেই বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচাল ছিলো। ওই বয়সে কৌতূহল বসে নিরুদ্দেশ হওয়ার উদাহরণ যেহেতু ভুরিভুরি সেহেতু নানামুখি ভাবনা থাকতেই পারে। রাকিবের ওই কথিত কারখানার উঠোনে নির্মাণাধীন সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর থেকে গলিত লাশ উদ্ধারের পর শুধু সজিবের নিটকজনেরা, কিংবা তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই নয়, আবাল বৃদ্ধ-বনিতা সকলেই অপহরকচক্রের হোতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছে। হয়েছে। যদিও দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের আগেই খতম-পতন সর্বক্ষেত্রে সমর্থনযোগ্য নয়।

যতো খারাপই হোক, মৃত্যুর পর সমাজে একটু আধটু হাপিত্যেস থাকে। রাকিবের মৃত্যুতে সেটুকুও পরিলক্ষিত হয়নি। সঙ্গত প্রশ্ন, তাহলে সে কতোটা খারাপ ছিলো? এরপরও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এক ভাই স্কুলশিক্ষক। রাকিবের সুপথে রাখতে না পারার দায় অবশ্যই অনেকের ওপরই বর্তায়। তার করুণ পরিণতি সচেতনদের দায়িত্ববান করে তুলুক, অমানুষগুলোকে মানুষ করতে সহায়ক হোক।