যোগাযোগ মাধ্যম সহজতর হওয়ার ধকল এবং

 

ইন্টারনেট গোটা বিশ্বকে শুধু একটি গ্রামেই রূপান্তর করেনি, হারানো বন্ধুকে খুঁজে পাওয়া সহজতর করেছে এই যোগাযোগ মাধ্যম। মনের কথা বলারও ক্ষেত্রও হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সাইট। ভুল করে ক্ষমা চাওয়ার জন্যও এখন আর রাস্তার মোড়ে লোকজড়ো করার দরকার নেই। ফেসবুকে লিখে দিলেই জেনে যাচ্ছে সকলে। যোগাযোগ মাধ্যম যতো সহজতর, সন্তানকে সামলানো যেন ততোটাই কঠিন হয়ে পড়ছে।

সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেসবুক বিপ্লব ঘটিয়েছে। যোগাযোগ সহজতর হওয়ার সুবাদে কেউ কেউ প্রতারণারও ফাঁদ পাতছে। প্রতারিত হয়ে অনেকেই নিজের জীবনটাও বিপন্ন করে তুলছে। প্রতারিতদের সিংহভাগই অপ্রাপ্ত বয়সের। ওরা শুধু প্রতারিতই হচ্ছে না, ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজাত প্রবৃত্তির গোপন বহু বিষয় জানার ধকল সামলাতে না পেরে বিপথগামীও হয়ে পড়ছে। সুযোগ পেলেই উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা কৌতূহল বসেই ওইসব নীলছবির সাইট ভিজিট করে বিপথে পা বাড়াচ্ছে। প্রতিকারে তেমন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

এক সময় যোগাযোগ মাধ্যম অতোটা সহজ ছিলো না, যতোটা সহজ হলে সকলকে ছাপিয়ে সব রকমের টপ টুক করে দিয়ে ছিপ ফেলে বসে থাকা যায়। লোভনীয় প্রস্তাবই হোক, আর ফুঁসলে অপ্রাপ্ত বয়সে সহজাত প্রবৃত্তিতে প্রলুব্ধ করার মতোই হোক, প্রতারকদের কবল থেকে রক্ষা উঠতি বয়সীদের রক্ষা করতে হলে দরকার সচেতনতা বৃদ্ধি। কে কেন কোনো ধরনের টোপে বিপথে আহ্বান করছে তা বোঝাতে সকল বিষয়েই সচেতনতার আলো ছড়াতে হবে। বিশেষ করে উঠতি বয়সীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে বাড়তি ধারণা দেয়া জরুরি।

ইন্টারনেট থেকে নিজেকে এবং সন্তানকে সরিয়ে রাখা মানে পিছিয়ে পড়া, পিছিয়ে দেয়া। সেলফোন তথা মোবাইলফোন যেমন যোগাযোগ মাধ্যম সহজতর করেছে, তারই মাধ্যমে ইন্টারনেটে যুক্ত হওয়াও এখন সহজ। যোগাযোগ মাধ্যমকে যতোটা সহজতর করা হয়েছে, অতোটা সতর্ক করার মতো বাস্তবমুখি কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে না। নূডি সাইটগুলো ভিজিট বন্ধ করতে পারে সরকারের বিটিসিএল’র কর্তারা। তারা কেন করছেন না? নির্দেশনার অভাব? নাকি দক্ষতায় ঘাটতি? সরকারের দায়িত্বশীলদের এদিকে বিশেষ নজর এবং বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

ফেসবুকে ফেক আইডি খুলে প্রতারণা বা আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিলে শাস্তির বিধান দেশে প্রচলিত। আইন থাকলেই হয় না, তার যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হয়। যোগাযোগ মাধ্যম সহজতর হওয়ার সুফল ভোগ করতে গিয়ে উঠতি বয়সীদের বিপথগামিতা জাতির ভবিষ্যতের ওপর কুঠারাঘাতেরই সামিল। বিষয়টিকে খাটো করে দেখলে চলবে না। বিপথগামী হওয়ার ঝুঁকিপূর্ণ সাইটগুলো বন্ধে সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সন্তানের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা দরকার। শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও দায়িত্ব অনেক।