যে যার আপন বোঝা তোলো….

 

আমাদের একটাই ধরিত্রী। আর পৃথিবী নামক এই ধরিত্রী তথা গ্রহটিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে সাতশ কোটি মানুষের যাবতীয় স্বপ্ন ও সম্ভাবনা। এর অস্তিত্বের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের তথা মানুষের অস্তিত্বও। কথাটি নতুন না হলেও আমাদের স্বার্থেই সব সময়ই প্রাসঙ্গিক। আর আজ? বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ধরিত্রীকে নিয়ে আর একটু যত্নবান হওয়ার তাগিদ অবশ্যই অমূলক নয়।

গত কয়েক দশক ধরে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে নানাভাবে যে বিষয়টি ঘুরে ফিরে আলোচনায় উঠে আসছে তা হলো পরিবেশের ভারসাম্য। মানুষের কারণেই মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল তথা আমাদের প্রিয় এই পৃথিবীর অস্তিত্ব ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে। জলবায়ুগত ভারসাম্যে চিড় ধরেছে। এর প্রভাবে মেরু অঞ্চলে শ শ বছরের সঞ্চিত বরফ গলে যাচ্ছে। বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাক। উদ্বেগের বিষয় হলো, এ অবস্থা মানুষেরই সৃষ্টি। মানুষের সীমাহীন লোভ-লালসাই পৃথিবীকে যে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে তা বলার এখন আর অবকাশ রাখে না। বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা বহু পূর্বেই সতর্কবার্তা দিয়ে দিয়েছেন। এখনও দিচ্ছেন। কিন্তু তা গ্রাহ্য হচ্ছে কতোটুকু? যদিও আমরা আমাদের দেশে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছি। বিশ্বউষ্ণায়নে মূলত যেসব উন্নত দেশ দায়ী তাদের তেমন তাগিদ লক্ষ্য করা না গেলেও এখন অবশ্য বিষয়টিকে সমস্যা বলে স্বীকার করতে শুরু করেছে।

বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের দেয়া বাণীতে তিনি বলেছেন, টেকসই উন্নয়নই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, যা পরিবেশের ক্ষতি না করে সকল মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটায় এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সুরক্ষার প্রশ্নে কখনই আপস করে না। শুধু ভোগের ধরন পরিবর্তনের মাধ্যমেই এটা সম্ভব। তিনি জ্বালানি, পানি ও অন্যান্য সম্পদ ব্যবহারে সংযমী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। গুরুত্ব আরোপ করেছেন খাদ্যের অপচয় হ্রাসের ওপরও। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই বক্তব্যের যথার্থতা অনুধাবনের জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। এমনিতেই বোঝা যায়। একদিকে যখন বিশ্বের বহু দেশে খাদ্যের জন্য পানির জন্য হাহাকার, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ খাদ্য ও পানি অপচয় হচ্ছে- বিষয়টি কারও অজানা নয়। জীবাশ্ম জ্বালানির যথেচ্ছ ব্যবহার শুধু যে ভবিষ্যত প্রজন্মের জ্বালানি-নিরাপত্তাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে তা নয়, একই সাথে পৃথিবীর পরিবেশগত ভারসাম্যও বিঘ্নিত করছে মারাত্মকভাবে।

সকলে মিলে শক্ত হাতে লাগাম টেনে ধরতে পারলে ভয়াবহ ভবিষ্যত থেকে ধরিত্রীকে রক্ষা করা সম্ভব। আমাদের একটাই পৃথিবী। যেকোনো মূল্যে একে বাঁচাতে হবে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ করে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য এড়াবার দিন শেষ গত হয়ে গেছে। কোনো অজুহাতেই আর কালক্ষেপণ কাম্য নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতে হয়- ‘সময় হলো সময় হলো, যে যার আপন বোঝা তোলো…’।