যে কোনো মূল্যে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ করা অপরিহার্য

শিক্ষা একটি জাতির মেরুদ-স্বরূপ। সংগত কারণেই শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে না পারলে এর প্রভাব হবে নেতিবাচক। আর সরকার যখন শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে নানারকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, তখন যদি জানা যায় শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ছে শিশুরা তবে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা গেল যে, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত বছর ঝরে যাওয়া শিশুদের অর্ধেকই স্কুল ছেড়েছে চতুর্থ শ্রেণিতে, যার মধ্যে ছাত্রদের পাল্লাই ভারী। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পরিচালিত ২০১৫ সালের প্রাথমিক বিদ্যালয় জরিপের তথ্য বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যখন বিশ্লেষণে ঠিক চতুর্থ শ্রেণিতে এসেই অর্ধেক শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে তখন এ দিকটি আমলে নিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের এর কারণ নির্ণয় করে সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে নানা কারণেই শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক থেকে যখন ঝরে পড়ছে তখন তা রোধ করতে হবে। আর এর জন্য যে কোনো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে কুণ্ঠিত হওয়ার সুযোগ নেই।আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ফলে যদি শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ না করা যায় তবে তার ফলাফল হবে উৎকণ্ঠাজনক, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
যখন সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে পাঁচ বছরের ব্যবধানে প্রাথমিকে ঝরেপড়ার হার ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ পয়েন্ট কমছে, তখন তা নিশ্চিতভাবেই ইতিবাচক। তবু শিগগিরই এ হার খুব বেশি কমবে না বলেই মনে করছেন প্রাথমিক শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা। ফলে বিষয়টি উদ্বেগেরই থেকে যাচ্ছে। জরিপ তথ্য অনুসারে গত বছর প্রাথমিকে ঝরেপড়া ২০ দশমিক ৪ শতাংশ শিশুর ১০ দশমিক ১ শতাংশ বা অর্ধেক ঝরেছে চতুর্থ শ্রেণিতে। এ ছাড়া ১ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে, ৩ দশমিক ২ শতাংশ দ্বিতীয় শ্রেণিতে, ৩ দশমিক ৪ শতাংশ তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণিতে ঝরে গেছে।
ঝরেপড়ার কারণ হিসেবে আর্থিক করণই মুখ্য। এ ছাড়া আরেকটি প্রধান কারণ হলো অভিভাবকদের অসচেতনতা। কেননা অনেক পরিবারই মনে করে স্কুলে যাওয়ার চেয়ে কোনো কাজ করে উপার্জন করলে তা বেশি লাভ হবে। ফলে একদিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে অন্যদিকে এর প্রভাবে শিশুশ্রমও রোধ হচ্ছে না। ফলে এ বিষয়টি সহজভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পুরো দেশ ও জাতির স্বার্থে যে কোনো মূল্যে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধ করা অপরিহার্য। ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের রোধ করতে একদিকে যেমন অভিভাবক সচেতনতা বাড়াতে হবে, তেমনিভাবে স্কুল পর্যায়ে আরো সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। একই সঙ্গে যেসব এলাকায় শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার হার বেশি সেসব এলাকা সামনে রেখে গ্রহণ করতে হবে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ। এ ছাড়া নির্দিষ্ট এলাকার সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে ক্যাম্পেইন করাসহ সচেতনতা বৃদ্ধিতেও প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। আয়ের জন্য অনেক পরিবারেই শিশুদের কাজে লাগাবে, শিশু বঞ্চিত হবে শিক্ষা অর্জনের মতো মৌলিক অধিকার থেকে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার বিষয়টি রোধ করতে পরিস্থিতি বিশ্লেষণসাপেক্ষে পদক্ষেপ নিন। এর আগে হাওর-বাঁওড়ের মতো দুর্গম এলাকায় শিশু শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়ার বিষয়টিও সামনে এসেছে। এভাবে সারা দেশের যে কোনো স্থানেই শিক্ষার্থীর ঝরেপড়ার বিষয়টি আশঙ্কাজনক। মনে রাখতে হবে, আজকের শিশুই আগামী দিনে দেশকে নেতৃত্ব দেবে। কোনো শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্তরেই যদি ঝরে পড়ে তবে এ পরিস্থিতির খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকেই; যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।