যখন অবৈধযান সড়ক থেকে উচ্ছেদ করা যাচ্ছেই না

 

পুলিশ একটু আন্তরিক হলেই অবৈধযানের আধিক্য এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনা যে বহুলাংশে হ্রাস পাবে তা বলাই বাহুল্য। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় অধিকাংশ দুর্ঘটনার জন্যই দায়ী শ্যালোইঞ্জিনচালিত অবৈধযান। স্থানীয়ভাবে প্রস্তুতকৃত অবৈধ এ যান প্রধান প্রধান সড়ক থেকে উচ্ছেদ দুরস্ত, দুর্ঘটনার পরও অবৈধ যানের দায়ী চালকের বিরুদ্ধে নূন্যতম আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয় না। অথচ অবৈধ চালকের হাতে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হত্যারই শামিল। অথচ আইনের যথাযথ প্রয়োগ নেই। উল্টো পুলিশ আপসের সুযোগই শুধু করে দেয় না, তড়িঘড়ি ঘটনা ধামাচাপা দিতেই যেন সহযোগিতা করে।

 

প্রায় প্রতিদিনিই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। অবৈধযান চক্রবৃদ্ধিহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব যান চালকদের অধিকাংশ যেমন অদক্ষ, তেমনই চলে বেপরোয়া গতিতে। গতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। সড়কে দানবের মতো রূপ ধারণ করে এসব অবৈধযান আঞ্চলিক প্রধান প্রধান সড়কেই শুধু চালানো হয় না, দিব্যি শহরের মধ্যে পুলিশের নাকের ডগায় ঘোরে। অবৈধযান চালকের নিকট থেকে টাকা নেয়ার দৃশ্যও ঘটে প্রকাশ্যে। অবৈধযান তো অবৈধই, তা সড়ক থেকে উচ্ছেদে কেন নমনীয়তা? মন্ত্রণালয় থেকে অবৈধযান উচ্ছেদের পুনঃপুন তাগিদের পরও জেলা পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে খানেকটা শিথিল দৃষ্টিতেই দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কখনো বলা হয়েছে, প্রধান প্রধান সড়কে চলাচল করতে পারবে না। কখনো বলা হয়েছে, অবৈধযানের চালককে দক্ষ হতে হবে এবং রাতে চলাচলের জন্য দুটি লাইট ওপরে নিচে জ্বালিয়ে বিপরীতমুখি যানের চালককে বোঝাতে হবে এটা শ্যালোইঞ্জিনচালিত। কারণ রাতে যখন একটি লাইট জ্বালিয়ে চলে, তখন বিপরীতমুখি যানের চালক মোটরসাইকেল ভেবে দুর্ঘটনার শিকার হন। এসব সিদ্ধান্ত যে অবৈধযানের প্রতি নমনীয় বা দরদী দৃষ্টিরই বহির্প্রকাশ তা অস্বীকার করা যায় না। কেন? জবাবে আমতা আমতা থাকলেও অঘোষিতভাবেই কারণ হিসেবে সামনে মেলে ধরা হয় বেশ কিছু অজুহাত। এর মধ্যে অন্যতম কর্মসংস্থান। অনেকেরই বেকারত্ব ঘুচেছে। পরিবারে এনেছে সচ্ছলতা। যদিও এ অজুহাতকে খোঁড়া অজুহাত হিসেবে অপরাংশ পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করে বলে, অবৈধযানে যতোটা কর্মসংস্থানের জোগান হয়েছে, তার চেয়ে অধিকতর পরিবারে চাপিয়েছে পঙ্গুত্বের বোঝা। আর পরিবহন ব্যবস্থা সহজতর? অস্বীকার করা না গেলেও সড়ককে মৃত্যুপুরি করে তুলে পরিবহন ব্যবস্থা সহজতর হওয়ার যুক্তিকে সবল যুক্তি বলা যায় কি?

 

যখন অবৈধযান সড়ক থেকে উচ্ছেদ করা যাচ্ছেই না। তখন অবৈধযানের কারণে পঙ্গুত্বের বোঝা হ্রাস, প্রাণহানি কমানোর মতো পদক্ষেপ কি নেয়া যায় না? যায়। কীভাবে? দুর্ঘটনা ঘটলেই বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অবৈধযান দুর্ঘটনার পর দেশের প্রচলিত আইনেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারলে আনাড়ি চালকদের বেপরোয়া চলাচল হ্রাস পাবে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অধিক মালামাল বোঝাইয়েরও প্রবণতাও দূর হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে বৈধ যান ও চালকের মতো আপসের সুযোগ অবৈধযানের ক্ষেত্রে রাখার কারণেই যে, সড়ক অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে তা উপলব্ধি প্রয়োজন। দরকার বাস্তবমুখি আশু পদক্ষেপ।