মোবাইল ব্যাংকিং : বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন

ছোট বড় সব ধরনের অপরাধের সাথেই আর্থিক লেনদেনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে। এ লেনদেন প্রক্রিয়া যদি হয় টেলিফোনের মাধ্যমে, তাহলে অপরাধের বিস্তার হওয়াই স্বাভাবিক। তাই বলে মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ করলে চলবে কেন? দিনবদলের ছোঁয়ায় যা কিছু সহজ তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে এটাই স্বাভাবিক। এখন প্রয়োজন এর খারাপ দিকগুলো সম্পর্কে বাড়তি সতর্কতা।

দেশে মোবাইল ব্যাংকিং চালু হওয়ার পর সহজে মানুষ টাকা পাঠাতে পারছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের বৃহদাংশ মোবাইল ব্যাংকিঙে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিঙের মাধ্যমে মাসে লেনদেনের পরিমাণ এখন ১২ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বেশি। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেনের তথ্য থেকে স্পষ্ট, মোবাইল ব্যাংকিং দেশের অর্থব্যবস্থায় কতোটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আর্থিক লেনদেনের এ সহজ পদ্ধতিটি বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি চাঁদাবাজি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়, হুন্ডি ব্যবসা, প্রবাসীদের জিম্মি করে টাকা আদায়, ‘জিনের বাদশা’ সেজে প্রতারণা, এমনকি মানবপাচারের মতো গুরুতর অপরাধে মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করার কারণে অপরাধীদের শনাক্ত এবং আইনের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না।

মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা অপরাধীরা নিতে পারছে টাকা পাঠানোর পদ্ধতিগত সুযোগ থাকার কারণে। মোবাইলে টাকা পাঠানোর সাথে সংশ্লিষ্ট এজেন্টরা একাধিক সিম ও ঠিকানা ব্যবহার করে টাকা লেনদেন করছেন। এ ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, যিনি টাকা পাঠাবেন এবং যার কাছে টাকা পাঠাবেন উভয়েরই অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এজেন্টের কাজ হচ্ছে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা ভরে দেয়া এবং অপর প্রান্তের এজেন্ট টাকা বের করে দেবেন। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে লেনদেন হচ্ছে, তাতে এজেন্ট নিজেই একাধিক অ্যাকাউন্ট খুলে লেনদেন করছেন। অপরাধীরা এ সুযোগে এসব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে লেনদেন করছে। কিন্তু টাকাটা কোথা থেকে এলো বা কার কাছে গেলো তার কোনো তথ্য থাকছে না। ভুয়া অ্যাকাউন্ট খোলা এবং এজেন্ট নিজেই লেনদেনের সাথে জড়িয়ে পড়া মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ হলেও তাতে খুব কম ব্যক্তিকেই শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে। অথচ, শাস্তি হওয়াটা খুবই প্রয়োজন।

অপরাধীদের মোবাইল ব্যাংকিঙের মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতে প্রথমে এজেন্টদের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়ানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মোবাইলফোনে লেনদেনের অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। তবে এমন কোনো কিছু করা উচিত হবে না, যাতে গ্রাহকেরা টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়েন। গ্রাহকের সুবিধা মাথায় রেখে এজেন্টদের কার্যক্রমে যদি স্বচ্ছতা আনা যায়, তাহলে মোবাইল ব্যাংকিং থেকে অপরাধীরা কোনো সুযোগ নিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।