মৃত্যুফাঁদে পরিণত সড়ক-মহাসড়ক

 

মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক।বাড়ি থেকে বের হলেই সড়কে মৃত্যু আতঙ্ক এ যেন নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশবাসীর। এর যেন কোনো প্রতিকার নেই। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। অকালে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। গত রোববার সকালে নরসিংদীর বেলাবো উপজেলায় বাসের সাথে সংঘর্ষে মাইক্রোবাসের ১২ যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এর রেশ কাটকে না কাটেই গতকাল সোমবার বিকেলে ফরিদপুর মধুখালীর আড়কান্দি এলাকায় দুটি বাসের সংঘর্ষে ৩ জন নিহত এবং অন্তত ২০ জন হয়েছেন। এছাড়া শুক্রবার রাতে ফরিদপুরের নগরকান্দায় গ্যাস সিলিন্ডারবাহী কাভার্ড ভ্যানের সাথে বেপরোয়া গতির যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে আগুন ধরে যায় দুটি গাড়িতেই। এতে পুড়ে মারা যান ১৩ জন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৯ জন।

পুলিশের তথ্যমতে, গত তিন বছরে গড়ে ২ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। তবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেবে, ২০১৬ সালেই ৪ হাজার ৩১২টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৬ হাজার ৫৫ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার মানুষ। এর আগের বছর প্রাণহানি হয় ৮ হাজারের বেশি মানুষের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে ধীরগতির যান চালকদের অসাবধানতা, অসতর্কতা এবং অদক্ষতাই অনেকাংশে দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন ও গবেষণাতেও জানা যায়, অধিকাংশ দুর্ঘটনার মূল অনুষঙ্গ বেপরোয়া গতি। চালকরা বেপরোয়া গতিতে এবং একের পর এক পাল্লা দিয়ে যান চালানোর কারণেই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। সত্যিকার অর্থেই আমাদের সড়ক মহাসড়কে কোনো শৃঙ্খলা নেই। সরকারের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগও খুব একটা চোখে পড়ে না। সড়ক নিরাপত্তা শুধু মুখে মুখেই। বাস্তবে কর্মসূচি নেই বললেই চলে। জাতিসংঘ ২০২০ সাল নাগাদ সদস্যদেশগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। ২০১১ সালে প্রকাশ করা ওই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশও সই করেছে। কিন্তু সেই ঘোষণা বাস্তবায়নে আমাদের কোনো কার্যকর উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নেই বললেই চলে।

সম্প্রতি সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার এবং হতাহতের ঘটনা যেভাবে বেড়েছে তাতে শঙ্কিত না হয়ে কোনো উপায় নেই। সড়ক-মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এবং আহতের ঘটনায় উদ্বিগ্ন নন এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। সব শ্রেণী-পেশার প্রতিটি সচেতন মানুষ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা ব্যবস্থা নিয়েও দায়িত্বশীল মহল বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না। ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অদক্ষ চালক কিংবা ধীর গতির যে কোনো যান যে সড়ক দুর্ঘটনায় বড় ধরনের নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। সুতরাং জননিরাপত্তার খাতিরে সরকারকে কঠোর অবস্থান নিতেই হবে। এর বিকল্প নেই। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনার অবসান আমরা সবাই চাই।

একটি দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি শুধু একটি পরিবারকেই পথে বসায় না রাষ্ট্রের সম্পদ বিনষ্ট করে, দেশীয় অর্থনীতিকেও দুর্বল করে দেয়। ফিনেসবিহীন গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ও ভুয়া লাইলেন্সধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আদালতের নির্দেশ এবং মহাসড়কে ধীর গতির যান চলাচল বন্ধ করতে সরকারের জারিকৃত প্রজ্ঞাপন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তবে বর্তমান অবস্থায় মহাসড়কের চলমান নৈরাজ্য বন্ধ করে জনদুর্ভোগ লাঘবের সব ধরনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে খুব দ্রুততার সাথে।