মায়ের দুধের বিকল্প নেই জেনেও …..

 

মায়ের দুধের বিকল্প নেই- একথা এখন শিশুরাও জানে। মায়েরাও জানেন। তবু আশঙ্কাজনকভাবে কমছে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের হার। ব্র্যাক যশোর সদর ও শার্শা উপজেলা এবং সিলেটের বিয়ানীবাজার ও ফেঞ্চুগঞ্জে জরিপ পরিচালনা করে সন্তানের মায়ের দুধ পান করানোর বিষয়ে যে তথ্য উঠে এসেছে তা উদ্বেগের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের হার আগের বছরগুলোর তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে বুকের দুধের পরিবর্তে শিশুদের গুঁড়ো দুধ খাওয়ানোর হার বিপজ্জনকহারে বেড়ে চলেছে। মাতৃদুগ্ধের বিকল্প ও শিশুখাদ্য আইন সম্পর্কে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দোকানি ও সাধারণ মানুষের ধারণা কম। অন্যদিকে আইনটি সম্পর্কে ধারণা থাকলেও চিকিৎসকদের কেউ কেউ কৌশলে বিকল্প শিশু খাদ্যের ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। মায়ের দুধ পান শিশুর অধিকার। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য মাতৃদুগ্ধ অপরিহার্য। মাতৃদুগ্ধ পান করানো শিশুর জন্য একটি ইতিবাচক দিক। সমাজের শিক্ষিত বা উচ্চ স্তরের নারীরা অপেক্ষাকৃত বেশি সচেতন। সীমিত জমি ও সম্পদের এই ক্ষুদ্রায়তন দেশটিতে অধিক মানুষ বসবাস করছে। তাই জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রচারণা যেমন অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। তেমনি মাতৃদুগ্ধ পান করানোর প্রচারণাও সে কারণে গুরুত্বপূর্ণ।

শঙ্কার বিষয় হলো জরিপে দেখা গেছে, শহুরে, আধুনিক, শিক্ষিত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির ধারণা এ রকম যে, শিশুকে মায়ের দুধ পান করালে মায়ের স্বাস্থ্যহানি ঘটে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে কিছু কিছু চিকিৎসক জেনেবুঝে কেবল কমিশন প্রাপ্তির প্রলোভনে অনৈতিক কাজ করছেন। এ রীতিমতো জ্ঞানপাপ! চিকিৎসকরা ব্যবস্থাপত্রে মাতৃদুগ্ধ বিকল্প বা শিশু খাদ্যের নাম না লিখলেও এসব খাদ্যের ছবি, নামসহ ছাপানো স্লিপ বা লিফলেট শিশুর অভিভাবকদের হাতে ধরিয়ে দেন।

আমরা মনে করি, গণমাধ্যমে সিগারেটের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা সম্ভব হলে মাতৃদুগ্ধের বিকল্প শিশু খাদ্যের বিজ্ঞাপনও বন্ধ করা সম্ভব। শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের হার বাড়াতে জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই আর সেজন্য জনসমাগমের সব স্থানকে কাজে লাগানোর কৌশল গ্রহণ করা যায় কি-না সেটাও ভেবে দেখা দরকার। মাতৃদুগ্ধ বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য সরকার ও অন্যান্য অংশীদারকে যার যার জায়গা থেকে নিবিড় দায়বদ্ধতার সাথে কাজ করার কোনো বিকল্প নেই। এ আইন ভঙ্গ করার জন্য মামলা করতে হবে এবং অন্যায়কারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।