মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের ঝুঁকি

 

মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি কর্মীরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরে না এলে জানুয়ারি থেকে তাদের বিতাড়িত করা হবে- এ খবরে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীরা এবং দেশে তাদের পরিবার-পরিজনরা স্বভাবতই উদ্বিগ্ন। অবৈধভাবে বসবাসকারীরা মালয়েশীয় সরকারের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে ৪০০ রিঙ্গিত জমা দিলে সাজা ভোগ ছাড়াই দেশে ফিরতে পারবেন। যারা এ সুযোগ নেবেন না, তাদের বিতাড়িত করা হবে। বিষয়টি দেশের শ্রমবাজারের জন্যও ক্ষতিকর। মালয়েশিয়ায় বর্তমানে বৈধ ও অবৈধ মিলে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। তাদের একটি বড় অংশ অবৈধ। অনেকে দালালদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে, অনেকে অবৈধভাবে জাহাজে করে, অনেকে পর্যটন ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে সেদেশে অবস্থান করছেন। স্বভাবতই তাদের অবস্থা ভালো নয়। অনেকে কাজ করছেন স্বল্প মজুরিতে। অবৈধভাবে অবস্থান করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। মালয়েশীয় সরকার ইতঃপূর্বে সিক্স পি কর্মসূচির আওতায় অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলো। কিন্তু তখন অনেকে দালালদের হাতে প্রতারিত হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের বৈধ করার চেষ্টা করলেও এখনও সুফল মেলেনি। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে কূটনৈতিক যোগাযোগ আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

 

আগামী ৩-৪ নভেম্বর কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে জনশক্তি সংক্রান্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে যেন বিষয়টির একটি ইতিবাচক সমাধান হয়, এ লক্ষ্যে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার ধরে রাখতে এবং তার আরও সম্প্রাসারণ চাইলে দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্টদের প্রতারণার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এদের কারণে আমাদের বৈদেশিক শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। রিক্রুটিং এজেন্টদের প্রতারণার কারণে মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রেখেছিলো। ২০১২ সালে সরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেও এ বাজার আবার হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তা যেন না হয়, সে বিষয়ে সরকারকে সজাগ থাকতে হবে।

 

বৈদেশিক কর্মসংস্থান সূত্রে প্রাপ্ত অর্থ তথা রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। কাজেই মালয়েশিয়াসহ বৈদেশিক শ্রমবাজারগুলোয় বিদ্যমান ঝুঁকি মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সাথে নতুন শ্রমবাজার সন্ধানের প্রয়াস রাখতে হবে অব্যাহত।