মারণ নেশার কালোথাবা গিলে খেতে বসেছে পুরো সমাজ

আফিম, হেরোইন, মরফিন, কোকেনের পর মারণ নেশার তালিকায় যুক্ত হয়েছে ইয়াবা। মাত্রাতিরিক্ত কোডিনযুক্ত ফেনসিডিল তো রয়েছেই। এছাড়া ঘুমের ইনজেকশনও ঠাঁই পেয়েছে নেশার তালিকায়। এসব ড্রাগজাতীয় নেশা সর্বনাশা। একবার কেউ এসব মারণ নেশার কবলে পড়লে তার আর ফেরার উপায় থাকে না। অবশ্য কেউ কেউ চিকিৎসা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেও পরিপূর্ণ সুস্থতা নিয়ে থাকে প্রশ্ন। এ নেশার কালো থাবা দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। মাঝে মাঝেই ফুটে উঠছে মারণ নেশার ভয়াবহ চিত্র।
চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশেই ইয়াবা নামক মারণ নেশা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ায় সচেতন অভিভাবক মহল উদ্বিগ্ন। গত …. দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় চুয়াডাঙ্গা মসজিদপাড়ার এক নেশাগ্রস্ত যুবকের করুণ চিত্র প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি সর্বস্তরের দায়িত্বশীলদের কিছুটা হলেও নিশ্চয় ভাবিয়েছে। এ ভাবনা থেকেই দরকার মারণ নেশা বিরোধী সামাজিক আন্দোলন জোরদার করা। মারণ নেশা যতো সহজলভ্য হবে, ততোই দ্রুত যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে এগুবে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, মারণ নেশার কবলে পড়ে বহু পেশাজীবী পেশা হারিয়ে হয়েছে ভিখেরি, ছিছকে চোর। সংসার গেছে উচ্ছন্নে। কতো যে মেধার অপমৃত্যু হয়েছে ভয়াল গ্রাসে তার ইয়ত্তা নেই। শুধু তাই নয়, নেশার টাকা জোগাতে কিশোরী কন্যা পুলিশের পদস্থ কমকর্তা পিতাসহ মাকে হত্যা করেছে। এরপরও নিশ্চয় বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়, ড্রাগজাতীয় মাদক কতোটা ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। মাদককারবারীদের রাঘব বোয়ালেরা সব সময়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। সমাজের পিছিয়ে পড়া পরিবার তথা দরিদ্র নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরদের কাজে লাগিয়ে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নেশাজাতীয় দ্রব্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে পুলিশ, সীমান্তরক্ষীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের বিশেষ তৎপরতায় মূলত ওই শ্রেণির পাচারকারীরা ধরা পড়ে। আর দেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা? কালেভাদ্রে একটু আধটু নড়ে চড়ে বসতে দেখা যায়। তাও আবার জেলা পর্যায়ের কর্তার রদবদল কালে। তারপর চুক্তি হলেই চুপচাপ। নীরব দর্শক। কখনো কখনো আড়মোড়া ভাঙতে মদ, গাঁজা, তাড়ির আখড়ায় হাজির হওয়ার দৃশ্যও অনেকটা গা সওয়া। সমাজের সচেতন অভিভাবক মহল? অলসতা তো আছেই, অধিকাংশই অন্যদিকে তাকিয়ে শুধু নিজের ছেলে-মেয়েকে রক্ষায় ব্যস্ত। কেন? মাদককারবারীদের দাপট কালক্রমে এতোটাই বেড়েছে, যে এককভাবে তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দের সুযোগ নেই। পুলিশের কথিত ক্যাশিয়ারের পাউয়ারে ওরা মিথ্যা মামলায় হেনস্তা করার কাজে সিদ্ধহস্ত। চুয়াডাঙ্গাতেই রয়েছে তার জীবন্ত প্রমাণ। সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ? বিড়ালের গলায় ঘণ্টাটা বাঁধার লোকের বড়ই অভাব।
ভয়াবহ মারণ নেশার কোনোটিই আমাদের দেশে তৈরি বা উৎপাদিত নয়। সবই পাচার হয়ে আসে বহির্বিশ্ব থেকে। পপির চাষ মাঝে কয়েক বছর আগে দেশের কিছু সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ার খবর মিললেও তা মূলত পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চলভুক্ত দেশেই বেশি হয়। বিদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা মারণ নেশা সমাজে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গ্রাস করছে যুবসমাজ থেকে শুরু করে সকল পেশার অসংখ্য নারী-পুরুষকে। প্রতিরোধে সীমান্ত প্রহরায় কড়াকড়ির পাশাপাশি সর্বস্তরে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা খুবই জরুরি।