মানসম্মত শিক্ষা ও শিক্ষক নিশ্চিত করতে হবে

 

দেশে ইতোমধ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে নানা রকম ইতিবাচক চিত্র ফুটে উঠেছে তা অসত্য নয় বটে। কিন্তু এর পাশাপাশি রয়েছে উদ্বেগজনক চিত্রও। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিন বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এসব শিক্ষার্থী ২০১৩ সালে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষা পাস করেছে। কিন্তু পরে আর শিক্ষার স্রোতধারায় টিকতে পারেনি। সমাপনী পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থী এবং এবারের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার্থীদের তথ্য পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। তিন বছরে আগে অনুষ্ঠিত পিইসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো ২৯ লাখ ৫০ হাজার ১৯৩ জন শিক্ষার্থী। আর এ বছর জেএসসিতে মোট পরীক্ষার্থী ২৪ লাখ ১০ হাজার ১৫ জন। এই চিত্র সাক্ষ্য বহন করছে শতকরা হিসাবে তিন বছরে ঝরে পড়ার হার ১৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার হ্রাস করতে ইতোমধ্যে সরকার ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করলেও এর ইতিবাচক প্রভাব কাঙ্ক্ষিত মাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি। বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, বাল্যবিয়ে রোধ, উপবৃত্তি প্রদানসহ নানা রকম যুগান্তকারী পদক্ষেপ সরকার ইতোমধ্যে নিয়েছে। এরপরও ঝরে পড়ার চিত্র উদ্বেগজনকই রয়ে গেলো কেন এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে উৎসে দৃষ্টি দিতে হবে। এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও একাডেমিক সমস্যা আছে বলে সংশ্লিষ্টরা যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তাও খতিয়ে দেখা জরুরি। প্রাথমিক স্কুল প্রতি গ্রামে আছে কিন্তু মাধ্যমিক স্কুল প্রতি গ্রামে নেই। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে পঞ্চম শ্রেণির পর শিক্ষার্থীরা দূরের স্কুলে যেতে আগ্রহী হয় না। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েরা যুক্ত হয়ে পড়ে গৃহস্থালি কাজে অন্যদিকে ছেলেরা প্রবেশ করে আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে। তাছাড়া অধিকাংশ স্কুলে টিউশন ও কোচিং প্রথা মারাত্মকভাবে বেড়েছে এবং এর বোঝা বইবার সাধ্যি নেই অনেক অভিভাবকেরই। সরকার নানা রকম ইতিবাচক পদক্ষেপও যেহেতু ঝরে পড়া রোধ করতে পারছে না তাই এর কারণ অনুসন্ধানে আরো গভীরে দৃষ্টি দিতে হবে। একই সাথে সামাজিক অস্থিরতা রোধ এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্যের ব্যাপারেও যথাযথ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। সার্বজনীন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলকে গুরুত্ব দেয়ার বিকল্প নেই। সবস্তরে বিশেষ করে সর্বাগ্রে নিচের দিকে শিক্ষার সর্বতো পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মানসম্মত শিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিতকল্পে যোগ্য শিক্ষকের বিষয়েও অধিক গুরুত্ব সহকারে ভাবতে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত ও বর্তমান সরকার মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন থেকে শিক্ষা খাতে ব্যাপক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ঘোষণা করেছে আগেই। সরকারের সদিচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনা থাকলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নির্বাচিত জনপ্রিয় সরকারের পক্ষে অসম্ভব হবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষকের সংখ্যাবৃদ্ধি, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ আনন্দময় ও উৎসাহব্যঞ্জক এবং যথেষ্ঠ সংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হলে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার দ্রুত কমে আসবে। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে উচ্চস্তর অবধি শিক্ষাখাতে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হোক।