মানবপাচারকারী ও প্রতারকদের দৌরাত্ম্য রুখতে হবে

কর্মক্ষম মানুষের তুলনায় আমাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ অনেক কম। ফলে বেকারত্বের হার এখনো অনেক বেশি। দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত বেকারত্বের অভিশাপ থেকে তরুণসমাজকে মুক্তি দিতে বিদেশি শ্রমবাজারের ওপর আমাদের নির্ভর করতেই হবে। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। অথচ পাঁচ বছর ধরে দেশটির দরজা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বন্ধ ছিলো। অব্যাহত কূটনৈতিক তৎপরতায় অবশেষে সেই দুয়ার খুলেছে। ১৯টি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশি কর্মী নিতে সম্মত হয়েছে দেশটি। এ ব্যাপারে গত বুধবার দু দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে এবং তা তখন থেকেই কার্যকর করা হয়েছে। এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি স্বস্তিদায়ক খবর।
বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অনেকেই মরিয়া হয়ে ওঠে এটি কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। অনেকে অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমানোরও চেষ্টা করে। কয়েক বছর আগে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে নৌকায় করে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমাতে গিয়ে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর অব্যাহত চেষ্টায় পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। এর মধ্যে দেশেও শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু এখনো মানবপাচারকারী ও প্রতারকদের দৌরাত্ম্য যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে। তাদের খপ্পরে পড়ে অনেক পরিবারই সর্বস্বান্ত হচ্ছে। সেদিক থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু তরুণদের কিছুটা হলেও আশ্বস্ত করবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে জনশক্তি রপ্তানি আবার শুরুর খবরটি। এখন সঠিক পদ্ধতি ও পন্থায় কর্মী পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যাতে এমন কিছু করার সুযোগ না পায়, যা আবারও দুয়ার বন্ধ হওয়ার কারণ সৃষ্টি করে।
সারা দুনিয়ায়ই প্রযুক্তির কল্যাণে কর্মপরিবেশ ও পদ্ধতি বদলে যাচ্ছে। কায়িক শ্রমের সুযোগ ক্রমেই কমে যাচ্ছে। মাটি কাটা ও পরিবহনের কাজও এখন যন্ত্রে হচ্ছে। ন্যূনতম কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা থাকলেই শুধু বিদেশের শ্রমবাজারগুলোতে বিদ্যমান প্রতিযোগিতায় আমাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হবে। তাই আমাদের আরো বেশি করে দক্ষ জনসম্পদ সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। তা না হলে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হতে থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে এ ক্ষেত্রে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলও ফলতে শুরু করেছে। কিন্তু এরপরও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। ৯ বছর আগে যেখানে দেশে কারিগরি শিক্ষার হার ছিলো মাত্র ১ শতাংশ, সেখানে ২০১৬ সালে এই হার দাঁড়ায় ১১ শতাংশে। এই ধারা আরো বেগবান করতে হবে। একই সাথে মানসম্মত শিক্ষার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণে আরও বেশি উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যমান বাজারগুলোতে যাতে আরো বেশি করে কর্মী পাঠানো যায় সেই চেষ্টা যেমন করতে হবে,একইভাবে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টিতে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। বেকারত্বের অভিশাপ পুরোপুরি দূর হয়ে যাক।