মানত এবং মানত শোধের আখড়া উচ্ছেদের অপচেষ্টা

একটি কবর বা মাজার ঘিরে মানত-বাণিজ্য পুরোনো। ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকসান নেই। দোকান জমে উঠলে শুধুই লাভ। লোকসানটা মানতকারীর। তিনি কোনো একটি বিষয়ে মানত করেন। যে আশায় মানত করেন তা পূরণ না হলে মানত দিতে হলো না, আর আশা পূরণ হলে মানত দিতে হলো। অত্যাধুনিক বিজ্ঞানযুগেও কোনো কোনো মানুষ মনের বাসনা পূরণের আশায় মানত করেন। এসব মানতকারীর ক’জনই আর বোঝেন যে আশা পূরণ হওয়া না হওয়ার বিষয়টি কোনো কবর বা মাজারের কিম্বা কোনো জীবিত বা মৃত মানুষের ওছিলার দরকার হয় না। কিছু বিষয় থাকে যা হতেও পারে নাও পারে। সে জন্য মানত দিতে হবে কেন?
মনের গভীরে সাহস সঞ্চারের জন্য কখনো কখনো কোনো কোনো দুর্বলচিত্তের মানুষ মানত করেন বলেই লালশালু বাণিজ্য বন্ধ হয়নি এখনও। তাই বলে গায়ের জোরে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর লালশালুর আস্তানা বা মাজার গুড়িয়ে দিতে হবে? ওটা গোয়ার্তুমি-গু-ামি। কোনো গোষ্ঠীর কোনো আদর্শ বা বিশ্বাস অপছন্দ হতেই পারে। তাই বলে চোখের সামনেই ওসব হতে দেবোনা বলে উসকানি দিয়ে উচ্ছেদ আইনসিদ্ধ নয়। নিজের যেমন পছন্দ অপছন্দ আছে তেমনই অন্যেরও আছে। নিজেরটার স্বাধীনতা চাইলে অন্যেরটা কেন নয়? চুয়াডাঙ্গা বুজরুকগড়গড়ি নীলার মোড়ের অদূরবর্তী মাঠে গোলাম মস্তফা শাফাতুল্লার মাজারে যারা হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তাদের আসল উদ্দেশ্য কি? হিংসা? নাকি অন্যের স্বাধীনতা দিতে না পারার মানসিক দৈন্যতা? অবশ্যই মানত বাণিজ্যের মূলভিত্তি কুসংস্কার। কুসংষ্কার তাড়াতে সচেতনতার আলো ছড়ানোর বদলে আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়া অন্যায়।
কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে সচেতনসতার আলো ছড়াতে পারলে ওই ধরনের আস্তানা থাকার কথা নয়। সচেতনতার আলো ছড়াতে হলে যেমন দরকার সমাজের আলোকিত মানুষগুলোর আন্তরিক প্রচেষ্টা, তেমনই দরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের সদস্যদের দায়িত্বশীলতা। নীলার মোড়ের মাজারে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়া গু-াদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নেয়া জরুরি। তাছাড়া বার্ষিক স্মরণসভা বা ওরশ হতে না দেয়ার হেতু খুঁজে বের করা প্রয়োজন। বারবার একই স্থানে নগ্ন হামলা হবে আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা থাকবে তাই আবার হয় নাকি? নিশ্চিত করতে হবে আইনের শাসন।