মাদক সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে, সমাজকে করে ধংস

 

মাদক সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে, সমাজকে ঠেলে দেয় ঝুঁকির মধ্যে। যুবসমাজ ধ্বংস হয়। তার কুপ্রভাব সমাজ তথা দেশকেই বহন করতে হয়। ফলে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। মাদক ও চোরাচালান একই সুতোয় গাথা। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ ভারত সীমান্তবর্তী। এ এলাকায় মাদকের অধিকংশই আসে ভারত থেকে। দেশে উৎপাদিত মাদকের চেয়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে নানাভাবে পাচার হয়ে আসা মাদক যুবসমাজকেই শুধু নয়, পেশাজীবীকেও বিপথগামী করছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বেশ কয়েকটি মাদকের অবৈধ দোকান রয়েছে। একটি বৈধ দোকান থাকলেও তার ক্রেতাদের তালিকা নিয়ে সন্দেহ ঘোরতর। নির্দিষ্ট ক্রেতাদের জন্যই বরাদ্দ দেয়া হয়। কারা ক্রেতা? কারা মাদক ভোক্তা? এদের অধিকাংশই হরিজন সম্প্রদায়ের। এছাড়া যারা রয়েছে তাদের মদপানের অনুমোদনপত্র রয়েছে। যাদের নামে লাইসেন্স রয়েছে তারা কি সত্যিই মদ কেনে? তারা কিনলে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে তো কোথাও মদের দোকান থাকার কথা নয়? বৈধ দোকান থেকেই তারা মদ কিনে দেদারছে বিক্রি করে। এর কুপ্রভাব সমাজে পড়ে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের ব্রিজের নিচে, বিদ্যুত অফিসের অদূরে, রেলওয়ে স্টেশনর আশপাশেসহ চুয়াডাঙ্গা নিচের বাজারেও অবৈধভাবে মদ বিক্রি করা হয়। মাঝে মাঝে পুলিশি অভিযান লক্ষ্য করা গেলেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের দায়িত্বশীলদের সেদিকে তেমন নজর পড়ে বলে পরিলক্ষিত হয় না। অভিযোগ আছে, যে মাদক বিক্রেতারা মাসোহারা দেয় না, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের জেলা পর্যায়ের কর্তারা সে সকল স্থানেই অভিযান চালিয়ে তাদের দায়িত্বশীলতার নজির স্থাপন করেন।

মদ, গাঁজা, হেরোইন, মরফিন, ফেনসিডিলসহ নাম না জানা মাদকের পাশাপাশি জুতোর আটাও এখন মাদকে রূপান্তর হয়েছে। গতকালই দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল ছিলো মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। এই দিনে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সুন্দর সুন্দর কথা বলা হয়, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচিও পালন করা হয়। কম বেশি এরও সুফল পড়ে সমাজে। প্রশাসন যতোটা সক্রিয় হলে সমাজ মাদকমুক্ত হয় ততোটা কি হয়? হচ্ছে? মাদকচক্র এতোটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিবাদের সাহস পাচ্ছে না সমাজের সচেতনমহল। কেন? মাদকচক্রের সাথে মাঠপর্যায়ের পুলিশের বিশেষ সম্পর্ক অথবা পুলিশের বিশেষভাবে নিযুক্ত ব্যক্তির সাথে মাদকচক্রের বাড়তি সখ্যে?

এরাই উল্টো মামলায় সমাজের সচেতনমহলকে ফাঁসায়। যার উদাহরণ বিগত দিনে এই চুয়াডাঙ্গাতেই রয়েছে। নতুন নতুন মাদক সমাজে ছড়াচ্ছে। কুফল সুফল নিয়ে সরকারি-বেসরকারি দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকা পালন সমাজের জন্য কল্যাণকর হবে।

মাদকপাচাররোধে সীমান্তরক্ষীদের পাশাপাশি অবশ্যই সীমান্তবাসীদের দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন। অবশ্য সীমান্তরক্ষীদের কেউ কেউ যখন মাদক পাচারে বিশেষ কারণে ছাড় দেয়ার মানসিকতা লালন করে তখন সীমান্তবাসীদের অধিকাংশই মাদকপাচারকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস হারান। মাদক পাচারকারীদের রাঘববোয়াল সমাজের নিম্ন শ্রেণির নারী-পুরুষ শিশুদের কাজে লাগিয়ে নিজেরা থাকছে নিরাপদ দূরত্বে। ফলে মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান প্রয়োজন।