মাদক এখন তরুণ-তরুণীদের মারণফাঁদ

 

যখন এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে যে, দেশে মাদকাসক্তের হার দ্রুত বেড়ে চলেছে, তখন তা কতোটা ভয়ানক বলার অপেক্ষা রাখে না। আরও বেশি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, মাদকের ছোবলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এমনকি মাদকাসক্তের এই ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না স্কুলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য মতে, মাদকসেবনের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয় ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে।

যাদের হাত দিয়ে আগামী দিনে দেশ ও মানুষের অগ্রগতির ধারা আরও বেগবান হবে তাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যদি মাদকাসক্ত হয় তবে তা শুধু বর্তমান পরিস্থিতি নয়, বরং আগামী দিনের জন্যও ভয়াবহ বাস্তবতাকেই নির্দেশ করে- যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, যেকোনো মূল্যে এই পরিস্থিতির নিরসন জরুরি। এমন বিষয়ও উঠে এসেছে যে, নেশার কবলে পড়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যেমন উচ্চশিক্ষার প্রতি অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে পাশাপাশি ক্লাস ও পরীক্ষায় তারা উপস্থিতি কমিয়ে দিয়েছে, অন্যদিকে কমে যাচ্ছে শিক্ষার মানও। এতে নৈতিক চরিত্রের পাশাপাশি মূল্যবোধের অবক্ষয়ও ঘটছে। ফলে এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা অসঙ্গত নয় যে, এই নেতিবাচক প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করতে না পারলে এর খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকেই যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ মাদকের আগ্রাসনে দেশের তরুণ-তরুণী তথা যুবসমাজের ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন্ন করে তুলছে- বিভিন্ন সময়েই এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধের সাথেও মাদক-উন্মাদনার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ফলে আমরা মনে করি, নেশার ভয়াল থাবা প্রতিহত করতে সরকারি উদ্যোগের বিকল্প নেই।

উল্লেখ্য যে, দৃশ্যত নানা রকম উদ্যোগ ও পদক্ষেপের কথা শোনা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক দৃষ্টিও থাকে মাদক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। এছাড়া দেশের মাদক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আলাদা দপ্তরও। তারপরও এর বিস্তার ও আগ্রাসন কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই এই অবস্থা অত্যন্ত উৎকণ্ঠার।

মাদক এখন তরুণ-তরুণীদের মারণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এমনকি মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে প্রাণ যাচ্ছে পিতা-মাতার! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকের নীল ছোবলে কোমল হাত পরিণত হচ্ছে ভয়ঙ্কর খুনির হাতে। আর এসবের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, পারিবারিক কাঠামোর শিথিলতার কারণে সন্তানদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়া এবং এ সংক্রান্ত অপরাধগুলোর দ্রুত বিচার না হওয়া। আমলে নেয়া প্রয়োজন, বর্তমানে মাদকাসক্তদের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও বেসরকারিভাবে বলা হয়, দেশে প্রায় ৮০ লাখের বেশি মাদকাসক্ত রয়েছে এবং মাদকসেবীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুবক, তাদের ৪৩ শতাংশ বেকার। আর এদের ৫০ শতাংশ অপরাধের সাথে জড়িত। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটেই এই ভয়াবহতা কোনোভাবেই ব্যক্তি পরিবার তথা একটি দেশ ও জাতির জন্য স্বস্তির নয়।

সরকারকে পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে মাদকের মারণছোবল থেকে রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি মাদকের বিস্তার রোধেও কঠোর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের মত আমলে নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। মনে রাখা দরকার, সন্তানদের মাদকাসক্তের দায় যেমন অভিভাবকরা এড়াতে পারেন না, তেমনিভাবে মাদকের বিস্তার ঘটতে থাকলে তার দায়ও সংশ্লিষ্টরা এড়িয়ে যেতে পারেন না। সঙ্গত কারণেই গণমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবেই মাদকের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা বৃদ্ধি করতে এবং সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। এর পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করারও বিকল্প নেই। কেননা যদি তরুণ-তরুণী বা যুবসমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করা না যায়, তবে এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়ানক, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়।