মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন অবশ্যই অবান্তর নয়

 

রেক্টিফাইড স্পিরিট পানে মাঝে মাঝেই মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের হোগলডাঙ্গা গ্রামে একজনের মৃত্যুর কয়েকদিনের মাথায় আলমডাঙ্গার আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে। নেশার জন্য রেক্টিফাইড স্পিরিট কে বিক্রি করে? হোমিওপ্যাথি ওষুধের দোকানে এ স্পিরিট পাওয়া যায়। তা হলে কি এলাকারই কোনো হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক অর্থের লোভে পড়ে নেশাখোরদের নিকট তা বিক্রি করেছেন? করছেন। এ অভিযোগে গতকাল আলমডাঙ্গার একজনকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।

কোনো নেশাই সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়নি, হয় না। এরপরও নেশা কেন? নানাবিধ জবাব আছে। মাদকদ্রব্য সহজলভ্যতাও অন্যতম কারণ। সে কারণেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আছে। নিয়ন্ত্রণ কি হচ্ছে? হলে দেশজুড়ে মাদকের অতো উগ্রতা কেন? মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাঠপর্যায়ের দায়িত্বশীলদের কারো কারো বিরুদ্ধে শুধু কতর্ব্যে অবহেলারই অভিযোগ উত্থাপন হয় না, অবৈধভাবে মাদকদ্রব্য বিক্রেতাদের মধ্যে যারা ঠিকমতো মাসোহারা দেয় না, তাদের বিরুদ্ধেই নাকি অভিযান চালান তারা। তা ছাড়া জনশ্রুতি আছে, কেউ মাদক পাচার বা বিক্রেতা হিসেবে একবার তালিকাভুক্ত হলে তার আর ফেরার রাস্তা থাকে না, ওই মাসোহারার জন্যই। মাসোহারা দিলে মাদক বিক্রিতে বাধা থাকে না, না দিলে মাদক বিক্রি না করলেও মামলার আসামি হতে হয় অনেকের। এসব অভিযোগ রেখে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের আশা করা কতোটুকু সমীচীন তা দায়িত্বশীলদেরই নতুন করে ভেবে দেখা দরকার। যাদের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয় তারা আন্তরিক হলে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনের স্বপ্ন নিশ্চয় অবান্তর নয়!কেন না, এখনও দেশে আইন রয়েছে। আইন প্রয়োগের জন্য লোকবল রয়েছে। এদের বেতন দেশের সাধারণ মানুষই দেয়।

শুধু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও মাদকবিরোধী অভিযান মাঝে মাঝে চালায়। ধরাও পড়ে। চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ভারত সীমান্তবর্তী জেলা। ভারত থেকে নানা নামের হরেক পদের মাদক পাচার করে আনা হয়। এক শ্রেণির মাদক পাচারকারী মাদক পাচার করে আনে। সমাজের ছিন্নমূল নিম্নবিত্ত শ্রেণির নারী-পুরুষ এমনকি শিশুদেরকেও মাদক পাচারের কাজে লাগানো হয়। এদের মাধ্যমেই সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মাদক ছড়িয়ে দেয়া হয়, হচ্ছে। তা ছাড়া সরকার অনুমোদিত মদের দোকান থেকেও অবৈধ ক্রেতাদের মাঝে যে মদ বিক্রি করা হচ্ছে না তাও নয়। এ কারণেই শহরে ও গ্রামে অবৈধ মদ বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। ভারত থেকে পাচার করে আনা ফেনসিডিল, হেরোইন-মরফিনের কবলে পড়ে সম্ভাবনাময়ী অসংখ্য যুবকের পতন ঘটেছে। বহু পেশাজীবী পেশা হারিয়ে পথের ভিখেরি হয়েছে। অকালেই ঝরতে হয়েছে তাদের। এসবের মাঝে রেক্টিফাইড স্পিরিট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। অবশ্য গত পরশু রেক্টিফাইড স্পিরিট পানে আলমডাঙ্গার একজনের মৃত্যুর পর এলাকার এক হোমিওপ্যাথি চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ জন্য পুলিশকে অভিনন্দন জানাতেই হয়। একজনকে গ্রেফতার করেই রেক্টিফাইড স্পিরিটের অপব্যবহার রোধ করা যাবে না, অভিযান অব্যাহত রাখার বিষয়টি ভাবতে হবে।

মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে হলে অবশ্যই সামাজিক আন্দোলন দরকার। এ আন্দোলন যে মাঝে মাঝে দানা বাধে না, তাও নয়। কিন্তু বাস্তবতার আলোকে মাদকচক্র এতোটাই ভয়ঙ্কর যে, তারা নাটক সাজিয়ে মিথ্যা মামলা করে সমাজের মাদকবিরোধী কমিটির নেতাকে হেনস্তা করতেও ছাড়ে না। এই চুয়াডাঙ্গায় লজ্জারও বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। এরপরও সাধারণ মানুষ মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে আন্তরিক। প্রয়োজন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।