মহিমান্বিত বরকতময় শবেবরাত

দিবস-রজনী-মাস-বছর সবই মহান আল্লাহর অপার সৃষ্টি। তারপরও কয়েকটি দিন ও রাত রয়েছে যাঅশেষ মহিমান্বিত বরকতময়। এটা আল্লাহতায়ালার শান ও কুদরতেরই প্রমাণ। যেকয়টি রাত মোবারক বলে আখ্যায়িত তার মধ্যে শবেবরাত বা লায়লাতুল বারায়াতঅন্যতম।

প্রকৃতপক্ষে লায়লাতুল বারয়াত অর্থ নাজাত,মুক্তি ও নিষ্কৃতির রাত। তবেবাংলাদেশসহ উপমহাদেশে একে ভাগ্যরজনী বলে অধিক পরিচিত। ফার্সি শব্দ‘বরাত’র প্রভাবে এরকম নামকরণ হয়েছে। এ ব্যাপারে কোরআন কারিমেসুস্পষ্টভাবে উল্লেখ না থাকলেও হাদিস শরিফে এটাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিনশাবান’বা মধ্য শাবানের রাত্রি নামে অভিহিত করা হয়েছে। ফজিলত ওবাস্তবসম্মত কারণে লাইলাতুল বারায়াতের সিয়াম পালন ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমেরাত যাপনের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা আর পক্ষকাল পরেই আসছেত্যাগ-তিতিক্ষার অনুপম দৃষ্টান্ত মাহে রমজান। লাইলাতুল বারায়াত মাসব্যাপিসেই প্রশিক্ষণের পূর্ব প্রস্তুতিস্বরূপ বললে ভুল হয় না। এজন্য এ রজনীকে বলা হয় রমজানেরমুয়াজ্জিন বা পতাকাবাহী।
সেই পবিত্র রাত আজ আমাদের মাঝে অপার রহমত নিয়েউপস্থিত। আজ জুম্মার দিন শেষে সেই রাতের শুভাগমন হচ্ছে। এ বিশেষ রাতেঅফুরন্ত সওয়াব হাসিল ও কল্যাণ কামনায় নফল নামাজসহ বাড়তি ইবাদত-বন্দেগিকরতে হয়। রাতভর কোরআন তেলাওয়াত,জিকির-আজকার,তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদিধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে হয়। এ রাত উপলক্ষে হালুয়া-রুটি,ফিন্নি-পায়েশ,খিচুড়ি,বিরিয়ানি প্রভৃতি বিতরণ বাধ্যতামূলক নয়। কেউ কেউ শবেবরাত উপলক্ষে আলোকসজ্জা ও পটকাবাজিসহ নানা অনৈতিক ও গর্হিত কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠেন। কিন্তু তা অনভিপ্রেত ও ইসলামী আদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

শবেবরাতে মহানবী (স.) বিশেষভাবে মদিনা মনোয়ারার জান্নাতুল বাকিতেগিয়ে কবর জিয়ারত করতেন। কেননা এ রাত মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারেদোয়া কবুল হওয়ার ও নৈকট্য লাভের রাতও বটে। অন্যদিকে ইমাম গাজ্জালিরমতে,শবেবরাত কিসমত ও তকদিরের রজনী। এ রাতে হায়াত-মওতের পাশাপাশি রিজিক,ধন-দৌলত লেখা হয় ও বান্দার আমল পেশ করা হয়। তবে এক রাতের ইবাদতেরমাধ্যমে ভাগ্য পরিবর্তিত হবে এমন বিশ্বাস ও ধারণা সর্বাংশে সঠিক নয়। কারণ আল্লাজাল্লা শানুহু বলেন,‘যতোক্ষণ না কোনো জাতি তার ভাগ্যোন্নয়নে সচেষ্ট হয়,ততোক্ষণ আমি তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করি না’।

অর্থাৎ আল্লাহর ওপরতাওয়াক্কুল বা ভরসা রেখে কঠোর শ্রম সাধনাও আবশ্যক। মহান আল্লাহ উম্মতেমোহাম্মদির (স.) ও সকল বনি আদমের ওপর অশেষ রহমত বর্ষণ করুন।আজকের রজনী বয়ে আনুক মুসলিম জাহানের মুক্তি, শান্তি, সমৃদ্ধি। আল্লাহুম্মা আমিন!