মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না

মহাসড়কে দুর্ঘটনা কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও এক বা একাধিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। গত বৃহস্পতিবার নরসিংদীতে মাইক্রোবাস ও যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দু বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনায় নিহত দম্পতির বিয়ে হয়েছিলো মাত্র দু মাস আগে। রাত দেড়টার দিকে মাইক্রোবাসটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের টাঙ্গালিয়া নামক স্থানে যাত্রীবাহী বাসটিকে ওভারটেক করতে গেলে ঢাকা থেকে সিলেটগামী একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে। ওদিকে গত শুক্রবার নাটোর সদর উপজেলার সৈয়দপুর মোড়ে বাস ও লেগুনার সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন তিন ব্যক্তি। একই দিন ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের জগদ্দল এলাকায় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে ট্রাকের ধাক্কায় তিন মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। বস্তুত বর্তমান বাংলাদেশে সড়ক বিশেষত মহাসড়কে যাত্রা মানেই জীবনবাজি রাখা।

এক হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর সড়কপথে অন্তত পাঁচ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় মারা যায় অন্তত চার হাজার মানুষ, পঙ্গুত্ব বরণ করে এর দ্বিগুন। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। দেশে নিরাপদ সড়ক চাই নামে আন্দোলন চলছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মিশুক মুনীর সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে এ আন্দোলন তীব্রতর হয়েছিলো। এরপর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুর্ঘটনা রোধে তৎপর হয়ে উঠেছিলেন। তার নেয়া কিছু বিশেষ ব্যবস্থার ফলে কিছুদিন বিশেষত ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনার হার কমে এসেছিলো। কিন্তু আবার ফিরে এসেছে আগের অবস্থা। বেপরোয়া গাড়ি চালনা এবং ওভারটেক করার প্রবণতা সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। নরসিংদীর দুর্ঘটনায় প্রমাণ পাওয়া গেলো, ড্রাইভারদের ওভারটেক করার প্রবণতা আগের মতোই রয়েছে।

সড়ক-মহাসড়কের দুর্ঘটনা অপ্রতিরোধ্য কোনো সমস্যা নয়। সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। দেশের সড়ক ব্যবস্থাপনার চিত্র এককথায় ভয়াবহ। অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি চালনার ভার দিয়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এ ভয়াবহতার একটি বিশেষ দিক। এছাড়া অপরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা, মহাসড়কের ওপর ট্যাক্সি-টেম্পোস্ট্যান্ডসহ যত্রতত্র হাট-বাজার স্থাপন, অনুপযুক্ত সড়ক-মহাসড়ক, খেয়ালখুশিমতো পার্কিং ইত্যাদি কারণেও ঘটছে অসংখ্য দুর্ঘটনা।

যোগাযোগমন্ত্রীকে আপাতদৃষ্টিতে করিতকর্মাই মনে হয়। তবে প্রবাদ আছে- বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়। সড়ক-মহাসড়কের দুর্ঘটনাই যদি বন্ধ না হলো, তাহলে মন্ত্রীর হাজারও তৎপরতার তাৎপর্য কী?

আমরা মনে করি, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি মানে শুধু দেশটাকে ছোট করে আনা নয়, চলাচলে মানুষের জীবন দুর্ঘটনামুক্ত রাখাটাও মন্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।