মহান বিজয় দিবস আজ

বছর ঘুরে আবার এসেছে ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়। অবসান হয় স্বাধীনতাকামী অবরুদ্ধ জনগণের অবর্ণনীয় রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষার। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

বহু লক্ষ মানুষের; নারী-পুরুষের রক্তের অক্ষরে লেখা আমাদের এ অনির্বচনীয় বিজয়ের ইতিহাস। ত্যাগে ও সংগ্রামে সমুজ্জ্বল-সেই রক্তাক্ত ইতিহাস কারও অজানা নয়। বিজয়ের এই দিনটি একদিকে যেমন অমলিন আনন্দে ও গৌরবে ভাস্বর, অন্যদিকে তেমনই স্বজনহারা শতসহস্র মানুষ এবং সম্ভ্রমহারা বহু মা-বোনের দুর্বিষহ স্মৃতি ও বেদনায় ভারাক্রান্ত। এই দিনে বিজয়ের আনন্দ উদযাপনের পাশাপাশি জাতি তাই জাতির বীর সন্তানদের স্মরণ করে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
বিজয় অর্জনের পর ৪২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। একটি রাষ্ট্রের জীবনে এটা একেবারে কম সময় নয়। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে যে, যেসব আদর্শ, উদ্দেশ্য ও স্বপ্নকে সামনে রেখে অগণিত মানুষ জীবন দিয়েছিলো, বিপুল ত্যাগ স্বীকার করেছিলো এ দেশের সর্বস্তরের মানুষ- তার কতোখানি অর্জিত হয়েছে? এ বাংলাদেশই কী চেয়েছিলেন তারা? রাজনৈতিক সহিংসতার বলি বহু মানুষের রক্তাক্ত স্মৃতি বিজড়িত এ বিজয় দিবসের উত্তর কি মিলবে? সহিংসতা ও রক্তপাতের ঘটনাবলীকে হালকা করে দেখার সুযোগ আছে কি? উদার গণতন্ত্রের রীতি-নীতি যেন বা আজ বিলীন হতে বসেছে। মুখে সকলেই গণতন্ত্রের কথা বললেও কোথাও সহিষ্ণুতার চিহ্নমাত্র নেই। আইনের শাসন ও নিয়মতান্ত্রিকতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধেরও যথেষ্ঠ অভাব পদে পদে পরিলক্ষিত হচ্ছে। সন্ত্রাস-সংঘাতই যেন হয়ে উঠেছে প্রতিবাদ ও দাবি আদায়ের অবলম্বন। তার কুফল তথা সহিংস রাজনীতির বলি হচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষ।

গণতন্ত্র ও মৌলিক রাজনীতির ক্ষেত্রে বিরাজমান এ হতাশাজনক বাস্তবতা আমাদের যতোই পীড়িত করুক, স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বিস্ময়কর অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে তাও অস্বীকার করার উপায় নেই। সমাজ ও অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই তা এতোটাই দৃশ্যমান যে, এ বিষয়ে বিশদ বর্ণনা অনাবশ্যক। সামগ্রিক জীবনমানের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। যে বাংলাদেশকে একসময় ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে পরিহাস করা হয়েছে- সেই বাংলাদেশই এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। অতএব, আমাদের বিজয় বা স্বাধীনতার স্বপ্ন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে গিয়েছে বলা বোকামি।

সামনে পড়ে আছে অফুরন্ত সম্ভাবনার হাতছানি। এ সম্ভাবনার পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হলে নিশ্চিত করতে হবে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন। আমাদের বীর শহীদেরা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন- সেই বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে এটাই প্রধান চ্যালেঞ্জ। মহান বিজয় দিবসে সকল শহীদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। বীর সন্তানদের প্রতি সালাম।