মরসুমি ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ প্রয়োজন

এখন আমের মরসুম চলছে। সারাদেশে আম উত্পন্ন হলেও দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সুস্বাদু আমের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। সারাদেশের চাহিদা মিটিয়েও কিছু আম এ সময় বিদেশে রফতানি হয়ে থাকে। এতে আম চাষিদের লাভবান হওয়ার সুযোগ কিছুটা বেড়েছে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর উৎপন্ন আমের ৩৩ শতাংশই নষ্ট হয়ে যায়। এর অন্যতম কারণ পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ ও হিমাগারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকা। বর্তমানে দেশে আমের যে বাজার রয়েছে তার আর্থিক মূল্য ধরা হয় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। ৩৩ শতাংশ আম নষ্ট না হলে এবং রফতানির সুযোগ আরো বেশি কাজে লাগানো গেলে এই বাজারের আর্থিক মূল্য যে আরো অনেক বেড়ে যেতো, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

শুধু আম নয়, আরো অনেক মরসুমি ফলেরই একই অবস্থা। জাম, লিচু ইত্যাদি ফল বাজারে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই আবার বাজার থেকে উধাও হয়ে যায়। কাঁঠাল,পেয়ারা, আনারসসহ কিছু ফল আছে, যেগুলো দিয়ে সীমিত পর্যায়ে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে জ্যাম, জেলি, জুস ইত্যাদি তৈরি হয়। আবার অনেক সবজিও একইভাবে মরসুমের অতি অল্প সময়ের মধ্যেই পচে নষ্ট হয়ে যায়। কৃষিজাত এসব ফল ও সবজির সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবার সময় এসে গেছে। আবার এসব সংরক্ষণে কেমিকেলের ব্যবহার নিয়েও আমাদের মধ্যে অনেক ভুল-বোঝাবুঝি রয়েছে। সারা দুনিয়াতেই ফল সংরক্ষণে কিছু পরিমাণে প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। ফলের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবেও কিছু রাসায়নিক পদার্থ আছে। যেমন আমে প্রকৃতিগতভাবেই ১.২২ থেকে ৩.০৮ পিপিএম পর্যন্ত ফরমালিন রয়েছে। এটি মানবশরীরের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। তেমনি প্রিজারভেটিভের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণও শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। এসব ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। জনসাধারণকেও এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। তা না করে ঢালাও প্রচারণা চালালে উভয় দিক থেকে ক্ষতি হয়। মানুষ ফল খেতে ভয় পায়, ফল খাওয়া কমিয়ে দেয়। অথচ সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রত্যেকের প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফল খাওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে ফল চাষি বা ফল ব্যবসায়ীরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের অর্থনীতি।

দেশে ফল ও সবজির উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি এগুলোর সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। ফল ও সবজিতে প্রিজারভেটিভ ব্যবহারেরও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকতে হবে। ফল ও সবজি নিয়ে আমরা যতো বেশি আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে পারব আমাদের অর্থনীতি ততো বেশি লাভবান হবে।