মন্তব্য কলাম: চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার দুটি ইউপি নির্বাচনের আংশিক ময়নাতদন্ত

অবশ্যই আমজনতার আকাঙ্ক্ষা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুনো

……………….ভোলাই নাথ পটল………………….

 

নেতার নেতৃত্বে তথা নিদের্শনায় সমাজ চলে। উন্নয়ন বা অবনতি হয়। স্থিতিশীলও থাকে। নেতৃত্বে ভালো-মন্দ বা ভুল-ত্রুটি বিচার করে জনগণ। সে হিসেবে নেতা এবং জনগণ সম্পূরক। নেতৃত্বে যেমন দরকার দক্ষতা তথা দূরদর্শিতা, তেমনই জনগণেরও বিচার ক্ষমতায় বিচক্ষণতা না থাকলে সমাজ কাত পথে গতি পায় না। বিপথগামিতার শঙ্কাও পদে পদে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, আমাদের সমাজ কোন পথে?

অবশ্যই আমজনতার আকাঙ্ক্ষা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুনো। পারা কিংবা না পারার জন্য যতোটা না সময় দায়ী, তার চেয়ে ঢের বেশি দায়ী ব্যক্তি স্বার্থে অন্ধত্ব বরণের প্রবণতা। এরপরও জনতার কাঠগড়ার রায় ভুল করে না। তারই কয়েকটি উদাহরণ চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার নতিপোতা ও নবগঠিত নাটুদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ জেলা সদরের বেগমপুর ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের উপনির্বাচনের ফলাফল। এ নির্বাচন ও নির্বাচনী ফলাফলের ময়নাতদন্ত করলে যে বিষয়টি ফুটে ওঠে, তা হলো সমাজের সাধারণ মানুষ সমাজকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নেয়ার জন্য উদগ্রিব। তা না হলে সাবেক জনপ্রতিনিধিদের ওপর অতোটা আস্থাহীনতা কেন? কেন সাধারণ ভোটাররা তাদের ওপর আস্থা রাখতে না পেরে নতুনদের দিকে ঝুঁকলো?

প্রশ্ন উঠতেই পারে, পুরাতনদের ওপর না হয় আস্থা রাখতে পারলো না জনগণ, যারা নতুন ছিলেন তাদের মধ্যে নির্বাচিতরাই কি জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবেন? হলফ করে হ্যাঁ বা না বলা কঠিন। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, নতিপোতা ও নবগঠিত নাটুদাহ ইউনিয়নের ভোটারসাধারণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন, নিজেরাই নিজেদের নেতা নির্বাচিত করেছেন। নির্বাচিতরা প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে না পারলে সাবেক তথা পুরাতনদের মতো আস্তাকুঁড়েই নিক্ষিপ্ত হবেন! এটা বলার কি অবকাশ রাখে? যুগে যুগে তাই হয়েছে, হচ্ছে। দরকার শুধু ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সুন্দর সমাজ গঠনে নিজেকে নিবেদিত করে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া। জনগণের অর্পিত দায়িত্ব পাওয়ার পর দলীয় সংকীর্ণতাই শুধু নয়, ব্যক্তি স্বার্থে অন্ধত্বের মানসিকতাও পরিহার প্রয়োজন।

নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যে দুজনের মধ্যে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে তারা দুজনই আওয়ামী লীগের। এদের মধ্যে অল্পভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় দেখে কারণ বিশ্লেষণ অমূলক নয়। শুধু ক্লিন ইমেজ থাকলেই হয় না, জনগণের সাথে দীর্ঘ সম্পৃক্ততাও যে প্রয়োজন তা নির্বাচনী ফলই স্পষ্ট। আর নবগঠিত নাটুদাহে? পূর্বের মতো এবার আর এপার-ওপারের ঢেউ তুলে আঞ্চলিকতার সুযোগ মেলেনি। যোগ্যতারই শুধু মূল্যায়ন নয়, দলীয় হলেও নির্দল প্রচারে সকল পক্ষেরই কম-বেশি আস্থা অর্জনে সক্ষমতা বিজয়ের হাসি ফুটিয়েছে। বিজয়ের হাসি যেদিন নিজের মুখ থেকে ইউনিয়নের সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারবেন সেদিনই তিনি হবেন গণমানুষের নেতা। আর এদিকে বেগমপুর ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের উপনির্বাচন? এ নির্বাচনের ফলাফল অবশ্যই প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনতার মানুষগুলোকে নতুন করে ভাবারই তাগিদ দিয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ মূলত স্থানীয় সরকার। সুন্দর সমাজ গঠনে কতোটুকুই আর অবদান রাখতে পারে? দেশের জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়নের বাস্তবতাসহ নানা কারণেই এরকম নাকসিটকানো প্রশ্ন ওঠে। এরপরও একটি ইউনিয়নের একটি পরিষদই পারে সুন্দর সমাজ গঠনের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে। রাস্তাঘাটের উন্নয়ন বা কোনো দুস্থের চাল-গম দিয়ে তুষ্ট করাকে এখন আর শুধু উন্নয়ন বলা চলে না। সচেতনতার আলো ছড়ানোর পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নও প্রত্যাশী।

উল্লেখ্য, নতিপোতা উউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদায়ী চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির পেয়েছেন মাত্র ৩৫ ভোট। নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক আজিজ পেয়েছেন ৪ হাজার ৯শ ৯৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ সমর্থিত রবিউল হাসান পেয়েছেন ৪ হাজার ৪শ ৭১ ভোট। আর বিএনপি সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জান টুনু পেয়েছেন ১ হাজার ৭৪৪ ভোট। আজিজুল হক আজিজ পূর্বেও এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। পূর্বে পরাজয়ে পিছিয়ে না গিয়ে তিনি ইউনিয়বাসীর সাথেই থাকার চেষ্টা করেছেন। ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান খুন মামলার আসামিও হয়েছেন। আর রবিউল হাসান? খানেকটা হঠাত করেই আসা। এরপরও তাকে ইউনিয়নবাসী যে অবমূল্যায়ন করেননি সেটাই তার সান্ত্বনা নয় কি? নবগঠিত নাটুদাহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ইয়াচনবী পেয়েছেন ২ হাজার ৫৩৮ ভোট। তিনি অবশ্য নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পর দলবল সাথে নিয়ে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মৌখিকভাবে ভোট গণনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বেসরকারিভাবে নির্বাচিত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শফি পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৪ ভোট। আর বিএনপি সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুল হক পেয়েছেন ১ হাজার ৯৪ ভোট। একটি বৃহৎ দলের সমর্থন এবং সাবেক চেয়ারম্যানের পরিচয়ও তাকে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তুলতে পারেনি। কেন? কারচুপির অভিযোগ ওঠেনি যখন, তখন এ প্রশ্নের জবাব না হয়- দলের স্থানীয় নীতি-নির্ধারকই খুঁজুক আর বুঝুক!