ভ্রান্ত উক্তি আওড়ানো সমাজে ভীতসন্ত্রস্ত কলেজছাত্র

 

হুজুগে বাঙালি মাঝে মাঝে নয়, সুযোগ পেলেই মনগড়া কথা বলে আতঙ্ক ছড়ায়। কানে হাত না দিয়ে চিলের পিছে ছুটতে শুরু করে। এসবেরই এক উদাহরণ চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার দলকালক্ষ্মীপুরে ভয়ে কাতর কলেজছাত্র ফারুক হোসেন। সাপ মারতে গিয়ে ছুটে তার অক্ষত হাতে পড়া রক্ত নিয়ে যে যার মতো ভয় দেখিয়েছে। বিভ্রান্তই শুধু হয়নি, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর যন্ত্রণাও অনুভব করতে শুরু করে। অগত্যা তাকে নিতে হয় হাসপাতালে। ঘটনাটি ঘটে গতপরশু রাত আটটার দিকে।

সাপ এমনিতেই আতঙ্কের, তারপর কেউ যখন তা নিয়ে  ভীতিকর উক্তি আওড়ে বিভ্রান্ত ছড়াতে শুরু করে তখন সচেতন হয়েও অনেকে দিশেহারা হয়ে পড়েন। দশেচক্রে যেমন অনেক কিছুই ভুত হয়। ভাগ্যিস হাসপাতালে নেয়া হয়েছিলো তাকে। ওঝার কাছে নিলে নির্ঘাত কাটা-ছেঁড়ার নাটক চলতো, তাতে হাতটাই হয়তো শেষ পর্যন্ত কেটে শরীর থেকে বাদ দিতে হতো। অতোটা হয়নি দেখে বলতেই হয়, সমাজে সচেতনতার আলো ছড়াচ্ছে ঠিকই। এ আলো ছড়ানোর গতি বৃদ্ধিতে সমাজের সচেতন মানুষ স্বোচ্চার হলে কোনো ভয়ই চরম ভীতুকেও কাবু করতে পারতো না। একদিন পারবে না, কেউ হুজুগেও মাতবে না। এখন শুধুই সেদিনেরই প্রতীক্ষা।

সাপে দংশন করলেই মানুষ মরে না, বিষ প্রয়োগ করতে হয়। বিষ প্রয়োগ করলে ওঝায় ঝেড়ে কেটে সুস্থ করা দূরাস্ত, ওঝা বেটে খাওয়ালেও ওই রোগী বাঁচে না, যদি না যথাস্থানে বাঁধন দিয়ে তাকে দ্রুত হাসপতালে নিয়ে অ্যান্টিস্নেক ভেনম অর্থাৎ সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করা ভ্যাকসিন না দেয়া হয়। যেহেতু সকল সাপের বিষ নেই, দংশন করলেই সর্বক্ষেত্রে বিষধরও বিষ প্রয়োগ করতে পারে না, সেহেতু ঝাঁড়ফুঁকের নাটকের মধ্যদিয়ে জারিজুরি দেখায়। বিশ্বাস জন্মে হাতিয়ে নেয় অর্থ। চলতি গরম মরসুমের শুরুতেই সাপ রাস্তায় দেখে দামুড়হুদায় তা হত্যার মহোৎসবের মধ্যদিয়ে অক্ষত হাতে ছিটকে পড়া রক্ত নিয়ে যা হয়েছে তা অসচেতনতারই বহির্প্রকাশ। কেননা, চিকিৎসক বলেছেন, ওতে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার ন্যূনতম কারণ নেই।

না জেনে না বুঝে হুট করে কিছু একটা বলে বিভ্রান্ত করা মানে এক ধরনের প্রতারণা করা। যার আড়ালে থাকে নিজেকে সবজান্তা সমসের বনে যাওয়া তথা আতেল বুদ্ধিমান সাজানোর অপচেষ্টা। এতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। যেমন কলেজছাত্র ফারুক হোসেনের হতে পারতো। আবার ফারুকেরও এ বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার আগে সচেতনতার পরিচয় দেয়া দরকার ছিলো। কেননা, তার তো জানা উচিত কোনটা কখন কীভাবে ক্ষতি করে। জানতে হবে এই কারণে যে, সে লেখাপড়া করে, কলেজছাত্র।