ভেজাল মেশাতে কার্পণ্য করছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা

বাংলাদেশে অধিকাংশ লোকের আয় সীমিত। যথার্থ হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে তাদের জীবন চলে। এই সীমিত আয়ের সাহায্যে ক্রেতা যখন মানসম্মত দ্রব্যাদি ক্রয় করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয় তখন জীবন পরিচালনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। পণ্যসামগ্রীর ক্ষেত্রে প্রতারণা এমন একটি জটিল সমস্যা যা সাধারণ মানুষকে অর্থাৎ ভোক্তা বা ক্রেতাদেরকে দারুণ সংকটে নিপাতিত করে এবং অনেক সময় জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভোক্তা ক্রয়কৃত সামগ্রী ভোগ করে অর্থাৎ সে উপভোগকারী। কিন্তু এ উপভোগ করতে গিয়ে প্রায়শই দেখা যায় সে তা বিভিন্ন কারণে উপভোগ করতে পারছে না। পণ্য উত্পাদন ও চাহিদার মধ্যে যখন কোনো প্রকার অসামঞ্জস্য ঘটে তখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা দেয়।

চাহিদার তুলনায় কোনো দ্রব্যের সরবরাহ যদি কম থাকে তাহলে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা দেয়। বাজারে পণ্যের অভাব দেখা দিলেই এই সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। অনেক জিনিস বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানি প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতার কারণে পণ্য বাজারজাত করতে দেরি হলে বাজারে পণ্যের ঘাটতি হয় এবং দাম বাড়তে থাকে। তবে কালোবাজারি, মজুদদারী ও মুনাফাখোরীদের লোভের ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।

মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল হলো খাদ্য। সংবিধানের ১৫ নম্বর অনুচ্ছেদে খাদ্যকে মৌলিক উপকরণ এবং ৩২ নম্বর অনুচ্ছেদে খাদ্যকে জীবনের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভেজাল খাদ্যের পরিমাণ এত বেড়ে গেছে যে তৈরি অথবা কাঁচা কোনো খাদ্যদ্রব্যের ওপরই মানুষ আর আস্থা রাখতে পারছে না। মাছ, মাংস, সবজি-তরকারি, ফলমূল ও বিভিন্ন বিপণির তৈরি খাবার, এমনকি শিশুখাদ্যে পর্যন্ত ভেজাল মেশাতে কার্পণ্য করছে না অসাধু ব্যবসায়ীরা। সমগ্র বিশ্বে খাদ্যে ভেজালের একটি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ প্রবণতা অনেক বেশি। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষণায় দেখা গেছে ক্যান্সারসহ অন্যান্য প্রাণঘাতী অসুখের অন্যতম কারণ হচ্ছে ভেজাল খাদ্য।

আমাদের দেশে বিচিত্রভাবে খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়। ফলে বিশ্বাস করে কোনো খাদ্য কেনাই সম্ভব হয়ে ওঠে না। আম, আনারস, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন ফল ক্যালসিয়াম, কার্বাইড, ইথেন ও ইথলিন দিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়। আমদানিকৃত ফল তাজা রাখার জন্যে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন খোলা বা অনেক সময়ে নামিদামি কোম্পানির মশলার প্যাকেটেও ভেজাল মেশানো হয়। মিনারেল ওয়াটার নামে যে পানি আমরা খাই তাতে বিশুদ্ধতা নিশ্চয়তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। প্রাণরক্ষাকারী ওষুধেও এখন ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় দেশীয় পণ্য বিদেশি পণ্য বলে বিক্রি করা হয়। ক্রেতা যে সকল সামগ্রী ক্রয় করছে ভোগের জন্য প্রায়শই দেখা যায় সে প্রতারিত হচ্ছে। আবার অনেক সময় ক্রেতা যে প্রতারণার শিকার হচ্ছে সে তা নিজেও বুঝতে পারছে না কিংবা এ সম্পর্কে সে সচেতন নয়। ক্রেতার অসচেতনতার অভাবেও বিক্রেতারা প্রতারণার সুযোগ নিয়ে থাকে।

ভোক্তা বা ক্রেতা যেন তার ক্রয়কৃত দ্রব্যাদি বা পণ্যসামগ্রী যথাযথভাবে ভোগ করতে পারেন সে লক্ষ্যে দেশে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে এই আইনটির যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস ২০১৮ উদযাপন করা হচ্ছে। ডিজিটাল বাজার ব্যবসায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিতকরণ। আশা করি এবারের প্রতিপাদ্যের বিষয়টি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে তা সুফল বয়ে নিয়ে আসবে এবং আমরা ভোক্তারা ভোগকৃত সামগ্রী উপভোগ করতে পারব। তবে এজন্য আমাদের সবাইকে সচেতনতারও পরিচয় দিতে হবে।