ভেজাল খাদ্যে ভরে গেছে দেশ

মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যগ্রহণ করতে হয়। জলে-স্থলেবিভিন্ন অবস্থায় তারা সৃষ্টির জন্য খাদ্যের সংরক্ষণ করে রেখেছেন। অথচ একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক এ খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে মানুষের অনিষ্ঠকরে যাচ্ছেন। এই খাদ্য খেয়ে যে তাদের স্বজনদের ও নিজেদেরও ক্ষতিসাধনহচ্ছে। তবুও সামান্য কিছু বাড়তি লাভের আশায় এ নিকৃষ্ট কাজ করে যাচ্ছেনতারা।গত বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ হাটখোলার একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নকল অ্যানার্জি ড্রিংক তৈরির রাসায়নিক পদার্থসহ নকল বোতল।

কোথায় নেই ভেজাল?নিখাঁদ নির্ভেজাল বলে কিছুখুঁজে পাওয়া ভার। সর্বত্রই ভেজালের জয়জয়কার। খাদ্যে ভেজাল। ওষুধে ভেজাল। চালে, ডালে, মাছে, তেলে ভেজাল। বিষেও ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। ভেজাল (ভুয়া) ডাক্তার, ভেজাল (ভুয়া) পুলিশ, র‌্যাব, মেজরে ভরেগেছে দেশ। ভেজাল করার ফরমালিনেও আজ ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। ভেজালের কারণে অকালেই ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য প্রাণ।

খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে যারা মানুষকে নীরবে হত্যা করছে তাদের এ ধরনের অপরাধেরশাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড ও বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানার বিধান থাকলেও কেউ তামানছে না। মাঝে-মধ্যে দুএকটি লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে জেল-জরিমানাকরা হলেও একেবারে নির্মূল করা যাচ্ছে না ভেজালকারীদের। জেল থেকে বের হয়েআবার পুরোদমে ভেজাল কার্যক্রম শুরু করে দেন। অথচ এ ভেজাল খাদ্য খেয়েপ্রতিবছর বাংলাদেশে চার লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিকসেআক্রান্ত হচ্ছে দেড় লাখ ও কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দু লাখ। গর্ভবতীমায়ের শারীরিক জটিলতার কারণে ১৫ লাখ বিকলাঙ্গ শিশু জন্মগ্রহণ করছে শুধুভেজাল খাদ্য গ্রহণের দরুণ।

মাছে বিষাক্ত ফরমালিন, ফলে মিশাচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বাইড, প্রোফাইল প্যারাটিটিনিয়াম পাউডার, বেকারি সামগ্রীতে রয়েছে বিষাক্ত রং, মুড়িতে মেশানো হচ্ছেইউরিয়া সার। জীবনরক্ষাকারী ওষুধেও ভেজাল। ভেজাল খাদ্য খেয়ে অসুস্থ হয়ে ওষুধখাবেন, রোগ সারছে না বরং আরও নতুন নতুন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। কারণ ওষুধেওভেজালে সয়লাব। আমরা আজ কোথায় এসে পৌঁছেছি কল্পনা করা যায়। সামান্য কিছুমুনাফার জন্যে লাখ জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে।

পাবলিক হেলথ ইনস্টিটিউটের খাদ্য পরীক্ষাগারের তথ্যানুযায়ী দেশের শতকরা ৪৫ভাগ এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী দেশের শতকরা ৫৪ ভাগ খাদ্যেইভেজাল মেশানো। ভেজাল মিশিয়ে ধীরে ধীরে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া যে একটা নীরবগণহত্যা তা বোঝার মতো সচেতনতা ভেজালকারীদের যেমন নেই তেমনি নেইক্রেতাসাধারণেরও। সরকারেরসংশ্লিষ্ট প্রশাসন এ ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। অধিকার রক্ষার তাগিদ যখনঅনুভূত হয় না, তখন তা নিয়ে কথা বলা নিষ্ফল আবেদন ব্যতীত অন্য আর কিছু নয়।ভেজাল খাদ্য ভক্ষণে কোনো নাগরিক অসুস্থ হলে বা মৃত্যুবরণ করলে তার দায়রাষ্ট্রের ওপরই বর্তায়।

ভেজাল যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। শুধু হাতকড়া পরিয়ে কয়েক মাসের জেলদিলেএর সমাধান হবে না। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভেজাল করার রাসায়নিকদ্রব্যের সহজপ্রাপ্যতা বন্ধ করতে হবে। ভেজাল দ্রব্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলোবন্ধ করে দিতে হবে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।ভেজালবিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো কোনো কথাই বলেন না। অথচ এটা একটাজাতীয় সমস্যা। মানুষের জীবন-মারণ সমস্যা।