ভেজাল ও বিষমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করা জরুরি

 

জাতিকে সুস্থ রাখতে হলে যে ক’টি পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ পত্র ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু ওষুধ বিক্রি বন্ধ করা, প্রকৃত চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ওয়েবসাইটে রেখে যাচাইয়ের সুযোগ করা, হোমিও চিকিৎসকদের যোগ্যতা দেখে নতুন করে সনদ প্রদানের ব্যবস্থার পাশাপাশি হাতুড়েদের চিকিৎসা প্রদানে কতোটুকু সীমাবদ্ধ তা জানিয়ে দেয়া। খাদ্যদ্রব্য ভেজাল মুক্ত করা, শাক-সবজিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ করা এবং ফল ফলারিতে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ বন্ধ করা।

বিলম্বে হলেও আমাদের দেশে কীটনাশক মুক্ত শাক-সবজি উৎপাদনে কৃষকদের উদ্বুব্ধ করা হয়েছে। সরকারিভাবে এ কর্মসূচি মাঠ পর্যায়ে পালনের খবর পত্র-পত্রিকায় যথাযথ গুরুত্বসহকারে তুলেও ধরা হচ্ছে। কলা কার্বাইডসহ রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ না করে পাকিয়ে গাছেই পুষ্ট করে প্রকৃতিকভাবে পাকিয়ে বাজারজাত করার জন্যও কলাচাষিদের পুনঃপুন তাগিদ দেয়া হচ্ছে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত পৃথক দুটি প্রতিবেদনের একটিতে বলা হয়েছে, বিষমুক্ত সবজি ও ফল বাজারজাত করা না হলে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক এ ঘোষণা দিয়েছেন। অপর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিষমুকত্ত কলা উৎপাদন করুন, সকলকে সুস্থ রাখুন। এ আহ্বানও জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক।

অবশ্যই কোনো অনিয়ম একদিনে ব্যাপকতা পায় না। আইন থেকেও কোনো লাভ হয় না যদি তার যথাযথ প্রয়োগ না থাকে। আমাদের দেশে অনিয়ম যতোটা ব্যাপকতা পেয়েছে তা অবশ্যই অতোটা পেতো না যদি যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যেতো। আইন প্রণয়ন করা হয়েছে অথচ তার প্রয়োগে অতোটা আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হয়নি। সে কারণে অনিয়মের মাত্রা দিন দিন এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্ত হাতে প্রতিরোধ করতে না পাররে পরিস্থিতি যে একেবারেই নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাবে তা নতুন করে বলাই বাহুল্য। অবশ্যই কৃষি প্রধান দেশে কৃষকদের সচেতন করতে হবে, করতে হবে দায়িত্বশীল। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগে জমির কতোটা ক্ষতি, মাত্রারিক্ত কীটনাশক প্রয়োগের পর নির্ধারিত সময়ের আগেই তা কেটে বাজারজাত করা স্বাস্থ্যের জন্য কতোটা ঝুঁকি তা কৃষকদের বোঝানোর পাশাপাশি আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করা জরুরি।

দেশে আসল-নকল খাবার যেমন চেনা ভার, তেমনই চিকিৎসকের সাইনবোর্ড দেখেও বোঝা কঠিন কোন চিকিৎসক আসল। গ্রামবাংলায় অসংখ্য ভুয়া ডিগ্রিধারী ভুয়া চিকিৎসক রয়েছেন, যাদের ভুল চিকিৎসায় সহজ রোগও জটিল হয়ে যাচ্ছে। আর ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রির বিধান মেনে বিক্রি দূরাস্ত অনেক ফার্মেসিই রয়েছেন যিনি রোগ শুনেই এন্টিবায়োটিকের মতো মারাত্মক ওষুধ দিয়ে দিচ্ছেন। রোগী সামান্য উপশমে ওই এন্টিবায়োটিকের কোর্স মেনে সেবনের গুরুত্ব না বোঝার কারণে অধিকাংশই জটিল স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিকে ধাবিত হচ্ছেন। এদিকেও যেমন বাড়তি নজর দেয়া দরকার, তেমনই দরকার খাদ্যদ্রব্য ভেজালমুক্ত করা।