ভুল বা অপচিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে হবে

 

ভুয়া ডিগ্রিধারী চিকিৎসকে ভরে যাচ্ছে দেশ। এদের অধিকাংশেরই দাবি- তারা ভারতীয় ডাক্তার। শুধু গ্রামাঞ্চলেই নয়, শহর উপশহরেও প্রকাশ্যে চেম্বার খুলে চিকিৎসার নামে দিব্যি প্রতারণা করছেন এরা। ক’দিন আগেই চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জে সেবা ক্লিনিক নামে খুলে বসা এক ব্যক্তির চেম্বারে ভুল চিকিৎসার শিকার রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এ অভিযোগ পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলেও মামলা পর্যন্ত গড়ায়নি। স্বাস্থ্য প্রশাসনের তরফেও তেমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি।

 

অবশ্য সকল অভিযোগই সবসময় সঠিক নয়। এ কারণেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের বিধান প্রচলিত। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে বিধি বিধানের দৃষ্টিতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারলে সমাজ থেকে অনিয়ম প্রবণতা বহুলাংশেই হ্রাস পাবে। যে কেউ ডিগ্রিধারী ডাক্তার সেজে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করার সুযোগ পাবে না। অপচিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ পত্রপত্রিকায় প্রকাশের পরও কেন তদন্ত হয় না? দায় এড়ানোর যুক্তি ভুরি ভুরি। তদন্তে তথা দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তা লিখিত অভিযোগ পাননি বলেই দায় এড়ান। যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট লিখিত অভিযোগ পেশ করা হয় না কেন? নানামুখি জবাব রয়েছে। অধিকাংশই ঝামেলা এড়ানোর অজুহাত খাড়া করে বলেন, লাশ নিয়ে টানাটানিই সার হয়, তদন্ত কর্তাকে খুশি করতে না পারলে অভিযুক্তই সুযোগ পায়। এসব যুক্তি উক্তির আড়ালে সুপ্তভাবে হলেও তদন্তকর্তাদের ওপর আস্থাহীনতারই যে ইঙ্গিত মেলে তা বলাই বাহুল্য।

 

যেহেতু সকল অস্বাভাবিক মৃত্যুরই প্রকৃত কারণ উন্মোচনে তদন্তের বিধান রয়েছে, সেহেতু পুলিশের দায় অনেক। ভুয়া চিকিৎসক, চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা প্রদান রোধের প্রাথমিক পদক্ষেপের দায়িত্ব অবশ্যই স্বাস্থ্য বিভাগের। স্বাস্থ্য বিভাগ শনাক্ত করে ভুয়া চিকিৎসকের তালিকা প্রশাসনকে সরবরাহ করবে। প্রশাসন পুলিশের সহযোগিতায় আইন প্রয়োগ করবে। স্বাভাবিক এ কর্মধারায় যে বড় ধরনের ফাঁরাক রয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। অবশ্য মাঝে মাঝে প্রশাসন অভিযান চালায়। গতপরশু চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ার ভুয়া চিকিৎসকসহ চক্ষুশিবিরের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়া এক প্রতারকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডাদেশও দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ দণ্ডাদেশ অবশ্যই এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভুয়া চিকিৎসকদের সুপথে ফেরাতে সহায়ক হবে। তবে প্রশাসনের তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়লে সে প্রত্যাশার অপমৃত্যু অনিবার্য। কেননা, স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসনিক কর্তাদের এদিকে তেমন নজর নেই বললেই চলে। নজরদারি থাকলে কি সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের আশেপাশেই গড়ে ওঠা বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবাদান কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশেই অতো অনিয়ম হতো?

 

ভুয়া চিকিৎসক শনাক্তের সহজ ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রয়োজনে ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের রেজিস্টার্ড নম্বর জানার সহজ ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রাম্য চিকিৎসকদের চিকিৎসাদানের পরিধি জানাতে যেমন সেমিনারের আয়োজন করতে হবে, তেমনই চিকিৎসাক্ষমতার সীমালঙ্ঘনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অপচিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। উদাসীনতা পরিস্থিতিকে আরো ভয়াবহ করে তুলবে।