ভিক্ষুকমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয় অবশ্যই প্রশংসার, তবে ….

 

সভ্য সমাজে ভিক্ষুক শুধু বেমানানই নয়, সমাজের কলঙ্কও বটে। সে হিসেবে ভিক্ষুকমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয় অবশ্যই প্রশংসার। চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে ভিক্ষুকমুক্ত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। একের পর এক ইউনিয়নের পর এবার উপজেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণাও করা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে শিগগিরই জেলা পর্যায়েও অভিন্ন ঘোষণা দেয়া হবে। এ ঘোষণার পর রাস্তায় ভিক্ষুক দেখা দিলে? আইন আছে, আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া নিশ্চয় গত্যন্তর থাকবে না! কিন্তু সেই সংখ্যা যদি ব্যাপক হয়?

একজন মানুষ ভিক্ষার হাত পাতেন কেনো? শুধুই কি অভাবে? স্বাভাগ্রস্থ হলেও তার মধ্যে নীতি নৈতিকতা, মূল্যবোধের অভাবটা তো থাকেই। বহু আগেই ‘আলোকিত চুয়াডাঙ্গা’ কর্মসূচির আওতায় চুয়াডাঙ্গাকে নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা করা হয়। সঙ্গত প্রশ্ন, তাহলে এখনও কেন ভোটে বা অন্য কোন কর্মকাণ্ডে স্বাক্ষরের বদলে টিপসই দেন অসংখ্য নারী-পুরুষ? তবে কি সেই ঘোষণা ছিলো খাতা কলমে? এরকম ঘোষণার কারণে অভিন্ন ক্ষুদ্র প্রয়াস দেশ বিদেশের সহযোগিতা হারায়। এবার ভিক্ষুকমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। ঘোষণাও দেয়া হচ্ছে। ভিক্ষাবৃত্তি দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ীয় অবৈধই নয়, দণ্ডণীয় অপরাধ। দেশ এখন আর উন্নয়নশীল নয়, নিম্নআয়ের স্বনির্ভর দেশ। ভিক্ষুকমুক্ত সমাজ গঠনের চলমান কর্মসূচি সর্বাত্মক সফল করতেই হবে। যদিও যখন সকলের মৌলিক চাহিদা শতভাগ পূরণে সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়ন হবে তখনই সেটা আশা করা উচিত। কেননা, অন্য, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা থাকলে নীতি নৈতিকতা মূল্যবোধ জাগ্রত হতে বাধ্য। চিকিৎসার সরকারি ব্যবস্থা থাকলেও আপ্রতুলতা ও অব্যবস্থাপনায় বহু পরিবার নিশ্ব হয়েছে, হচ্ছে। বাসস্থানের অভাবে উদবাস্তু, বস্তিবাসী খুঁজে হয়রান হওয়ার দরকার হয়না, হাতের কাছেই রয়েছে বহু উদাহরণ। কর্মসংস্থানের অভাব এখনও পদে পদে পরিলক্ষিত হয়। স্বল্পমূল্যে চাল-আটা বিক্রি করা হলেও নির্ধারিত বিক্রেতাদের কটূকৌশলের কারণে দুস্থদের অনেকেই পরাস্থ। তাছাড়া হাত পাতলেই যখন ঝুলি ভরার লোভটাও তো মূল্যবোধ না বোঝা মানুষগুলোর কাছে লোভনীয়। ফলে ভিক্ষুকমুক্ত ঘোষণা করা হলেও শঙ্কা কিছুটা থেকেই যাচ্ছে নাকি?

যত শঙ্কাই থাকুক, যে যাই বলুক। ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতেই হবে। সরকারিভাবে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি সফল করতে সমাজের বৃত্তবানদেরও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। ভিক্ষুকের হাতে কিছু অর্থ দেয়ার চেয়ে তাকে স্বাবলম্বী বা স্বনির্ভর করার মতো অনুদান দেয়াই ভালো। ধর্মও এরকমই নিদের্শ করে। তাছাড়া দরিদ্র্য দূর করার সরকারের বাস্তবমুখি নানা পদক্ষেপ শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। সর্বস্তরে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের যোগান দেয়ার পাশাপাশি নিখরচায় মান সম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করাটাও জরুরি।