ব্যতিক্রম হিমাগার এবং আমাদের দেশে কৃষি পণ্য

কৃত্রিম উপায়ে নয়, আমাদের দেশের কৃষকেরা প্রকৃতির ওপর ভরসা রেখেই আবাদ করেন। ফসল ফলান। সে কারণে যখন যার আবাদ হয় তখন সেই আবাদের বাজার দর নেমে যায়। উৎপাদিত ফসল যদি সংরক্ষণ করা হয় তা হলে কৃষককূল উপযুক্ত দর পাবে।

সবজি জাতীয় কৃষি পণ্য সংরক্ষণ করতে হলে দরকার হিমাগার। যা ব্যয়বহুল। প্রয়োজনীয় হিমাগার গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি, হচ্ছে না। এর মাঝে আশার আলো জাগিয়েছেন অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন। রাজশাহী নগরীর চকপাড়ায় আকাফুজি গবেষণা নার্সারিতে স্থাপন করা হয়েছে একটি ব্যতিক্রম হিমাগার। ৩শ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ব্যতিক্রমী হিমাগারটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১৪ লাখ টাকা। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রাকৃতিক প্রযুক্তি। যার প্রধান উপাদান বাঁশ। হিমাগারটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রাকৃতিক বাতাসের সদ্ব্যবহার হয়। এখানে হাতেগোনা যে ফ্যান লাগবে তাও চলবে প্রকৃতির শক্তিতে তথা সৌরশক্তির মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে এ ধরনের শস্য সংরক্ষণাগার এটাই প্রথম।

বিকল্প এ হিমাগারের প্রবর্তক ও উদ্ভাবক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেন। প্রকল্প পরিচালকের মতে, গাছ শেকড়ের মাধ্যমে পানি তুলে পাতার মাধ্যমে বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় নিজেকে ঠাণ্ডা রাখে। এজন্য গাছের পাতা খরতাপের মধ্যেও ঠাণ্ডা বা শীতল থাকে। এই প্রাকৃতিক প্রযুক্তিকে এ সংরক্ষণাগার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে। অধিকাংশ সময় কৃষক তার উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায় না। তারা আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং হতাশায় উদ্যম হারায়। যেমন- কোনো কোনো বছর দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়। তখন হিমাগার না থাকায় আলু রাস্তায় গড়াগড়ি খায়। কৃষকের মাথায় হাত পড়ে। আরও কতিপয় পণ্যে এ সমস্যা প্রকট। এ সমস্যা থেকে কৃষককূলকে উৎরাতে ব্যতিক্রম ও স্বল্প ব্যয়ে নির্মিত হিমাগার সুফল বয়ে আনবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

অতএব, বিকল্প হিমাগারের আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কামনা করি আমরা। প্রচলিত হিমাগারের খরচ অনেক বেশি। এতে দ্রব্য মূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ধরনের প্রাকৃতিক শস্য সংরক্ষণের গুরুত্ব সর্বাধিক। একে আমাদের সর্ব উপায়ে উত্সাহিত করা বাঞ্ছনীয়।

পুনশ্চ: প্রকৃতির দান আর মানুষের জ্ঞানের সমন্বয়-ই দিতে পারে স্থায়ী সমাধান।