বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা

 

বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক নিয়োগে কালক্ষেপণ ও জটিলতা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। গত ২২ অক্টোবর থেকে বন্ধ রয়েছে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রায় এক বত্সর ধরে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা দিয়েছে শিক্ষক সংকট। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। বিশেষ করে সাধারণ বিষয়গুলো অন্য শিক্ষকরা পড়াতে পারলেও ইংরেজি, বিজ্ঞান, কৃষি ও কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং গণিত পড়ানো সব শিক্ষকের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে কোথাও কোথাও খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। কোথাও কোথাও আট-দশ মাস ধরে এই ধরনের শিক্ষক একেবারে না থাকায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থেমে থাকায় প্রার্থীরাও উদ্বিগ্ন।

উল্লেখ্য, ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির পরিবর্তে এইসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করার কথা জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ)। এই সমন্বিত শিক্ষক নিয়োগের পদক্ষেপ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। কেননা এর আগে বহুক্ষেত্রে অর্থের বিনিময়ে অদক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এক সময় এমন পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে যায় যে, অর্থ খরচ করেও অনেকে চাকরি না পেয়ে প্রতারিত হন এবং তাদের মামলা-মোকদ্দমায় শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত ঝুলে থাকছে বছরের পর বছর। এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিধিমালা সংশোধন করে এনটিআরসিএ-কে এই শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব দেয়। তারা গত জুনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে শিক্ষকের চাহিদার তথ্য সংগ্রহ করে। এর পর জুলাইয়ে অনলাইনে আবেদনপত্র চাওয়া হয়। ১৫ হাজার পদের বিপরীতে আবেদনপত্র পড়ে ১৩ লাখ। কিন্তু এর যাচাইবাছাই এখনও সম্পন্ন হয়নি। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে অত্যাধুনিক সফটওয়্যারের সাহায্যে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর কলেজ ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে এক সপ্তাহ লাগে, সেখানে একই প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাচাই-বাছাইয়ের কাজে এতো কালক্ষেপণ কেন? এর জন্য এনটিআরসিএ-র কর্মকর্তাদের অদক্ষতাকে দায়ী করছেন তারা। কেউ কেউ প্রথমবারের মতো এই ধরনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট হয়েছেন বলেও সমস্যা হচ্ছে।

যেহেতু শিক্ষক সংকটে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে, তাই অবিলম্বে নিয়োগ সম্পন্ন করা উচিত। আইটি বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে হলেও উচিত দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করা। এনটিআরসিএ প্রথমবারের মতো এই ধরনের দায়িত্ব পালন করছে। তাতে কিছু সমস্যা ও সংকট দেখা দেয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে এক্ষেত্রে আন্তরিকতারও অভাব আছে বলে প্রতীয়মান হয়। এজন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতিও সংস্কার করা আবশ্যক। যেহেতু উপজেলা কোটায় শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে, তাই আগে থেকেই উপজেলা মেধা তালিকা প্রকাশ করা হলে প্রার্থীদের খরচের বহর কমে যাবে। আবার শিক্ষক নিবন্ধনের মেয়াদ ও পাস-স্কোর নিয়েও প্রশ্ন আছে অনেকের মনে। এইগুলোরও যৌক্তিক সমাধান প্রয়োজন।