বিড়ম্বনা অ্যানালগের চেয়েও বেশি

কলেজে ভর্তির সনাতনী পদ্ধতি ছেড়ে অনলাইন পদ্ধতি চালু করার পেছনে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটা প্রয়াস ছিলো বটে, তবে তা যে এতো দুর্ভোগের কারণ ঘটাবে, তা আগে বোঝা যায়নি। দুর্ভোগ মানে কী, চরম ভোগান্তি! এক কথায় বলা যায়, এ পদ্ধতির জাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে ও হচ্ছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। ভোগান্তিটা শুরু হয় ভর্তি প্রক্রিয়াটি চাপিয়ে দেয়ার পর থেকেই। কোনো পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই হুট করে অনলাইন পদ্ধতি প্রবর্তন করায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রক্রিয়াটি সবিস্তার বুঝে উঠতে পারছিলেন না। শিক্ষার্থীরা আবেদন তো করলো, এরপর কী হলো? দেখা দিলো কারিগরি ত্রুটি ও দুর্বল ব্যবস্থাপনা। শুরু হলো আবেদনকারীদের অপেক্ষার পালা। টানা কয়েকদিন অপেক্ষার পর রোববার মধ্যরাতে যখন ফল প্রকাশ করা হলো, তখন অনেকের মাথায় হাত। কমপ্লেনের পর কমপ্লেন। একজন গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে, অথচ সে কোথাও টেকেনি! কলেজ পরিদর্শকদের কাছে জমা হলো অভিযোগপত্রের স্তূপ। অন্যদিকে যারা যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে, তারা পড়লো আরেক সমস্যায়। অনলাইনে ভর্তি ফরম ডাউনলোড করতে বিড়ম্বনা, সার্ভারের ধীরগতি, আরও কতো কী! সংকটের এখানেই শেষ নয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে চার ধাপে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং প্রথম ধাপের পর যেসব ছাত্রছাত্রী ভর্তি হবে, তাদের গুনতে হবে জরিমানা। অথচ বিলম্বটা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা সরকার। তারা ফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটিয়েছে; কিন্তু তার দায় নিতে হবে শিক্ষার্থী তথা অভিভাবককে! ওদিকে আবার পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ক্লাস কার্যক্রম শুরু ১ জুলাই, অথচ প্রথম ধাপের ভর্তি প্রক্রিয়াটি শেষ হচ্ছে ২ জুলাই। অর্থাৎ বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী ক্লাস কার্যক্রমের শুরুটা ধরতে পারবে না! আমরা বুঝে উঠতে পারি না, ১৫ লাখ ছাত্রছাত্রীর ভর্তির মতো একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন এতোটা বিশৃঙ্খলা ঘটিয়েছে। সম্পূর্ণ নতুন এবং প্রযুক্তির সাথে সম্পর্কিত একটি প্রক্রিয়া এতো হেলাফেলার হতে পারে, ভাবা যায় না। আমরা বলবো, নতুন এ পদ্ধতির অব্যবস্থাপনার কারণে একজন ছাত্র বা ছাত্রীও যদি কোনোভাবে বঞ্চিত হয়ে থাকে, তাহলে পদ্ধতিটি ব্যর্থ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা যতো সহজে মুখে বলা যায়, বাস্তবে কাজটা ততো সহজ নয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত ছিলো, পদ্ধতিটির কথা অনেক আগেই জানিয়ে দেয়া এবং এতদসংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে যথেষ্ট প্রচারণা চালানো। প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারণে যে ফল প্রকাশে বিলম্ব ঘটেছে, তাকে সাধারণ ব্যর্থতা বা ভুল বলে পার পাওয়া যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা, নতুন এ পদ্ধতির কারিগরি বা অন্য কোনো ত্রুটির কারণে যারা বঞ্চিত হয়েছে, তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।