বিশ্বাস করুন, দেশবাসী সহিংসতা নয়, শান্তি চায়

একদিকে নির্বাচনী প্রস্তুতি, অপরদিকে হরতাল অবরোধ জ্বালাও পোড়াও। দু দিকের দু নেত্রীর দিকে তাকিয়ে সারাদেশের মানুষ। ক্ষমতাসীন নেত্রী সংলাপের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী সম্মতি জানালেও জুড়ে দিচ্ছেন শর্ত। দু পক্ষের টানাটানিতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোথায় গিয়ে ঠেকছে? গণতন্ত্রের চর্চাই বা থাকছে কোথায়?

 

নির্বাচন কি হচ্ছে? নির্বাচন হলে তাতে সকল দল কি অংশ নিচ্ছে? বিরোধীদলীয় জোট নির্বাচনে অংশ না নেয়া মানে সেই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মতোই কি হবে না? না, দেশের রাজনৈতিক নেতারা অতোটা বোকা নয়, তারা তা থেকে যে শিক্ষা নিয়েছে সেই শিক্ষা ঠিকই কাজে লাগাচ্ছে, লাগাবে। তবে দেশের সাধারণ মানুষ যেমনটি চায় ঠিক তেমনটি বোধকরি হবে না, হয় না। গণতন্ত্র যা বলে জনগণের তো তাই চাই।

 

‘সালিস মানি তালগাছ আমার’ মানসিকতা নিয়ে বসে থাকলে যতোবারই সালিস হোক না কেন, সমাধান মিলবে কি? নির্বাচনী প্রস্তুতি চলছে। যথাসময়ে নির্বাচনী তফশিল ঘোষণার কথাও জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেনা মোতায়েনের গুরুত্ব তুলে ধরতেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কমতি করেননি। দাতা দেশগুলোসহ উন্নত দেশের প্রতিনিধিদের মুখে কিছুদিন ধরে সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের কথা বললেও, গতকাল ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিরোধী জোট নেত্রীকে নির্বাচন বয়কট না করার আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে বিএনপির বৃহদাংশ নির্বাচনে না গেলেও একাংশ নির্বাচনে যোগ দিতে পারে। তারই প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আইনগতভাবেই জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। অবশ্য জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের তরফে জানানো হচ্ছে, নির্বাচনে অংশ নিতে সমস্যা নেই। দরকার শুধু দু জোটের সমঝোতা। সমঝোতাই তো অন্ধকারে! অপরদিকে নির্বাচন কমিশন থেকে জেলা পর্যায়ে নির্বাচন অফিসগুলোতে ভোটার তালিকাসহ ভোটের প্রয়োজনীয় উপকরণ পাঠাতে শুরু করেছে। গতকালই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

 

স্বাধীনতার পর বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে দেশের অসংখ্য নূর হোসেনের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে পাওয়া গণতন্ত্র কোথায়? দেশবাসীর মতামতকে তো গণতন্ত্র ভয় পায় না? তা হলে ভয় পাচ্ছে কে? একদল ক্ষমতার মসনদে, অপর দল মসনদের প্রহর গুনছে। দু দলেরই দেশের সাধারণ জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই ওখানে অধিষ্ঠিত হতে হবে। সকল দল তো সে কথাই বলছে। অথচ বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলাচল। অনিশ্চয়তা।

 

স্বচ্ছ নিরপেক্ষ অবাধ নির্বাচন না হলে দেশের সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না। দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনই আশা করে। কোনো দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন হলে তা নিশ্চয় প্রশ্নাতীত হবে না। দেশের শান্তি ফিরবে বলেও আশা করা যায় না। বিশ্বাস করুন, দেশবাসী সহিংসতা নয়, শান্তি চায়।