বিশ্বব্যাপী করোনার ঝুঁকি

করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯-এর অতি দ্রুত বিস্তৃতির কারণে সারা বিশ্ব নড়েচড়ে বসেছে। এরই মধ্যে ১২১টি দেশে সোয়া লাখের বেশি মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বুধবার একে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করেছে। অনেক দেশই আক্রান্ত দেশগুলো থেকে যাত্রী, এমনকি পণ্য পরিবহনও বন্ধ করে দিয়েছে। সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র শুধু যুক্তরাজ্য ছাড়া সব ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতও বিভিন্ন ধরনের ভিসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশও এ ঝুঁকির বাইরে নয়। এরই মধ্যে তিনজন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন সম্প্রতি ইতালি থেকে দেশে এসেছিলো। আর এদের একজনের সংস্পর্শে এসে স্থানীয়ভাবে একজন সংক্রমিত হয়েছে। একইভাবে আরও রোগী আসা কিংবা তাদের সংস্পর্শে রোগটি স্থানীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। তাই ভাইরাসটির বিস্তৃতি রোধে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে এবং অত্যন্ত কার্যকরভাবে সেগুলোর প্রয়োগ করতে হবে।
চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও মহামারী বিশেষজ্ঞরা রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ভাইরাসটি কিছুটা ভারী হওয়ায় বাতাসে খুব দূরে ছড়ায় না। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সঙ্গে জীবাণু এক থেকে দুই মিটার পর্যন্ত দূরে যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি ছড়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে, সেটি চেয়ারের হাতল থেকে শুরু করে থালাবাসন পর্যন্ত অনেক কিছুই হতে পারে। তাই বিজ্ঞানীরা বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন। হাত না ধুয়ে চোখ, মুখ, নাক বা মুখম-লের কোনো অংশে স্পর্শ না করতে বলছেন। এ রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন বয়স্ক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা। তাই তাদের ব্যাপারে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকতে বলা হলেও তা করা হয় খুবই ঢিলেঢালাভাবে। এতে কেউ আক্রান্ত হলে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
করোনার বিস্তৃতি অর্থনৈতিকভাবেও সারা বিশ্বে এক বিপর্যয়কর অবস্থা সৃষ্টি করেছে। পুঁজিবাজারগুলোয় রীতিমতো ধস নামছে। বিমান, পর্যটনসহ অনেক বাণিজ্যে ভয়াবহ খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। চীনের বাইরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ এখন ইতালি। সেখানে খাবার ও ওষুধের দোকান ছাড়া সব দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের চামড়াশিল্পের বড় ধরনের নির্ভরশীলতা থাকায় এ শিল্পে এরই মধ্যে খুবই খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। বিশ্ব ব্যাংকের ধারণা, বাংলাদেশের রফতানি খাত বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে। তাই জনস্বাস্থ্যের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবেলায়ও আমাদের আরও সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে উঠেছে।