বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, অথচ…

বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। সেখানে সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেধা ও মননের চর্চা হবে, সবচেয়ে পরিশীলিত আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে শিক্ষার্থীরা, সেটাই তো প্রত্যাশিত। কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? ঠিক তার উল্টোটা নয়কি?

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কথায় কথায় সংঘর্ষ, সন্ত্রাস, হামলা, খুনোখুনি লেগেই আছে। নোংরা দলবাজি হচ্ছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, লুটপাটের অভিযোগ অহরহ শোনা যাচ্ছে। এর জন্যই কি একটি গরিব দেশের গরিব জনগণ এসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য কোটি কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে? ভাবতেও কষ্ট হয়। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের এক নেতা নিহত হওয়ার দু দিনের মাথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। আগেও এ রকম বহু হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এভাবে আর কতো মৃত্যু আমাদের দেখতে হবে? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিহত ছাত্রলীগ নেতার নাম রুস্তম আলী আকন্দ। তিনি ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। গাইবান্ধার এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ছেলের লাশ বাড়িতে যাওয়ার পর থেকে মা বুক চাপড়ে কাঁদছেন, আর বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। আর কতো মা, কতো বাবা এভাবে ছেলের লাশের সামনে দাঁড়িয়ে বুক চাপড়ে কাঁদবেন এবং সেই কান্না আমাদের অসহায়ের মতো দেখতে হবে?

প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রুস্তম চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। শুক্রবার দুপুর ১টায় বিছানায় শুয়ে বই পড়ছিলেন তিনি। এ সময় জানালা দিয়ে আততায়ীরা তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায়- বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা তাহলে কোন পর্যায়ে? দিনদুপুরেও সেখানে কোনো শিক্ষার্থী নিরাপদ নয়? তাহলে এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের পাঠাবেন কোন ভরসায়? কয়েক দশক ধরেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে এক ধরনের অরাজক অবস্থা। আর এতে মদদ জুগিয়ে যাচ্ছে আমাদের নষ্ট রাজনীতি। ছাত্রসংগঠনের নামে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তারা প্রকৃত অর্থে কিছু ক্যাডার লালন-পালন করছে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়সহ হেন অপকর্ম নেই যা তারা করছে না। রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাদের যথাযথভাবে বিচারের মুখোমুখিও করা যায় না। ক্ষমতাসীন দলে থাকলে তারা ধরাকে সরাজ্ঞান করে। আর বিরোধীদলে থাকলে বিরোধীদল ক্ষমতায় আসার পর নির্বিচারে তাদের কর্মীদের ছেড়ে দেয়া হয়, মামলা তুলে নেয়া হয়। এই যখন সংস্কৃতি, তখন এই অপরাধীদের থামাবে কে? আমরা এ জঘন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে মুক্তি চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের উপযুক্ত পরিবেশ চাই। এ ক্ষেত্রে দলমত-নির্বিশেষে সবারই এগিয়ে আসা উচিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রুস্তম হত্যার সাথে যারাই জড়িত থাক, দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।