বিদ্যুত চুরি রুখতে প্রয়োজন আরো শক্ত আইন

 

বিদ্যুত চুরি নতুন না হলেও চুরির ধরনে এসেছে নতুনত্ব। নিঁখুতভাবে মিটার কারচুপি অবশ্যই যার তার কাজ নয়। দক্ষতার দরকার হয়। বিদ্যুত বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সোচ্চার হলে মিটার কারচুপির মাধ্যমে বিদ্যুত চুরিই শুধু হ্রাস পাবে না, চুরির কাজে সহযোগিতা করা দক্ষ ব্যক্তিকেও শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব। তা কি হবে? হবে, হবে না। কখন হবে, কখন হবে না- কেন হবে, কেন হবে না, তা বোধ করি বোদ্ধাদের বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হয় না।

চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুত চুরি প্রবণতা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। আদালত কয়েকজনকে জরিমানাও করেন। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জের দোকানে বিদ্যুতের মিটার কারচুপি করে দিব্যি বিদ্যুত চুরি করা হচ্ছিলো। ভ্রাম্যমাণ আদালত হাতেনাতে ধরে ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন। জরিমানার অর্থ সাথে সাথে পরিশোধ করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দর্শনার এক ব্যক্তি ওই মিটার অর্থের বিনিময়ে সুক্ষ্মভাবে কারচুপি করে দিয়েছে। সেই ব্যক্তিকে অবশ্য শনাক্ত করা হয়নি। নেয়া যায়নি দণ্ডের আওতায়। বিদ্যুত চুরি করে দিব্যি বরফকল চালাচ্ছিলেন চুয়াডাঙ্গা মাচপট্টির এক ব্যক্তি। হকপাড়ার এক গ্রাহকও মিটার কারচুপি করে বিদ্যুত চুরি করছিলেন বেশ কিছুদিন ধরে। আর কতোজন এভাবে বিদ্যুত চুরি করছেন? এদের সাথে বিদ্যুত বিতরণ অফিসের কারো কি যোগসাজশ আছে?

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চার্জ দেয়ার জন্য অটো প্রতি ১১০ টাকা হারে গুনতে হয়। অটো চার্জের দোকানগুলোতে প্রতি রাতে যদি কম করে ২০টিও চার্জ দেয়া হয় তা হলে টাকা আসে কতো? প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে জমা হলে ৩০ দিনে জমে ৬০ হাজার টাকা। ব্যাটারি চার্জের মূল কাঁচামালের নাম বিদ্যুত। আর বিদ্যুতই যদি হয় চুরি করা, তা হলে লাভের পরিমাণ কতো হয়? সে কারণেই এ ধরনের চোরদের শুধু জরিমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কারাদণ্ডেরও বিধান প্রয়োজন নয় কি? দেশকে ডিজিটাল করার অন্যতম প্রথম শর্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত। বর্তমান সরকার চাহিদা পূরণে বিদ্যুত উৎপাদনে আন্তরিকতার পাশাপাশি পড়শি দেশ থেকেও তা কেনার পথে হেঁটেছে। বিগত যে কোনো সময়ের তুলনায় বিদ্যুত উৎপাদন বেড়েছে। বিতরণ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ত্রুটির কারণে গ্রাহকদের মাঝে সবসময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দেয়া সম্ভব না হলেও দফায় দফায় লোডশেডিঙের যন্ত্রণা তো গেছে!

বিদ্যুত চুরি ঠেকাতে না পারলে লোকসান বাড়বে। যন্ত্রণা ফিরবে। ফলে বিদ্যুত চুরি রুখতে হবে। চলমান ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রাখতে পারলে বিদ্যুত চুরির প্রবণতা হ্রাস পাবে। বিদ্যুত বিতরণ বিভাগের কিছু অসাধু ব্যক্তি আছেন, যারা বিদ্যুত চুরিতে সহায়তা করেন, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারলে গ্রাহকরা চুরির সাহস হারাবেন। আর মিটার কারচুপি? চোর ও চোরের সহযোগীকে আরো কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রয়োজনে আইনে দণ্ডের পরিমাণ বাড়াতে হবে।