বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা যুযোপযোগী করা জরুরি

সারাদেশে বিদ্যুত ব্যবস্থার বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে জাতীয় গ্রিডের কারিগরি ত্রুটির কথা। কিন্তু জাতীয় গ্রিডের ত্রুটির ফলে কি সারাদেশের বিদ্যুত ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে? বিদ্যুতের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ বিপর্যয়কে কারিগরি ত্রুটি বললেও এর মূল কারণ নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে। যদিও বিদ্যুত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাতীয় গ্রিডের ত্রুটির কারণে সারাদেশের বিদ্যুত ব্যবস্থায় বিপর্যয় সাধারণত ঘটে না। আরো বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে এটা শুধু গ্রিড ফেল নয়, আমাদের বিদ্যুত ব্যবস্থার পুরো প্রটেকশন সিস্টেমই ফেল করেছে। ফেল করার পূর্বাভাস না পাওয়া অবশ্যই অদূরদর্শীতার বহির্প্রকাশ।

 

বিদ্যুত বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। তিন দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দেবে। বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, কি কারণে এ বিপর্যয় ঘটেছে তা নির্দিষ্ট করে এখনি বলা যাচ্ছে না। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দিলে এর সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যাবে। বিদ্যুত বিপর্যয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন বলেন, অনেকগুলো কারণে বিদ্যুতের এ বিপর্যয় হতে পারে। বিদ্যুত প্ল্যান্ট থেকে উত্পাদিত বিদ্যুত সরাসরি জাতীয় গ্রিডে পাঠানো হয়। এভাবে অনেকগুলো পাওয়ার প্লান্টের উত্পাদিত বিদ্যুত ঢুকছে। এরপর এ বিদ্যুত বিভিন্ন সাব-স্টেশনের মাধ্যমে ভোল্ট কমিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেক সময় ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের মধ্যে ব্যালান্স না হলে লোডশেডিং করতে হয়। আর যদি জাতীয় গ্রিডের সাথে যুক্ত কোনো একটি সাব-স্টেশনে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে ওই কেন্দ্রটি ব্রেক (বন্ধ) দিয়ে অন্য কেন্দ্র দিয়ে সঞ্চালন সচল রাখা যায়। তিনি বলেন, প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কিলোমিটার জাতীয় গ্রিডে ৯০ থেকে ৯৫টি বিভিন্ন ক্ষমতার সাব-স্টেশন রয়েছে। আর সব সাব-স্টেশন তো একসাথে বিকল হয়ে যাবে না? অধ্যাপক ইজাজ বলেন, তাহলে কেন এ বিপর্যয়? ভারত থেকে নেয়া বিদ্যুত কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ভেড়ামারায় ত্রুটি দেখা দেয়। কুষ্টিয়ার বিদ্যুত কর্মকর্তারা বলেন, ভেড়ামারার রামকৃষ্ণপুরে অবস্থিত ভারত-বাংলাদেশ ব্যাক টু ব্যাক বিদ্যুত সঞ্চালন কেন্দ্রে আকস্মিক বিপর্যয় ঘটে। এরপরই জাতীয় গ্রিডে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে যে বিষয়টি ফুটে উঠেছে তা হলো- আমাদের বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা একেবারে দুর্বল। প্রশ্ন একই সাথে গ্রিড কি ভারতের গ্রিডের লেভেলের? লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার আরইআরএলডিসি, কোলকাতায় তাদের কন্ট্রোলরুম থেকে জানিয়েছে, ভারতীয় সময় বেলা এগারোটার দিকে বহরমপুর-ভেড়ামারার মধ্যেকার দুটি লাইনের মধ্যে একটি লাইন মিনিট খানেকের জন্য ট্রিপ করে যায়। পশ্চিমবঙ্গের পাউয়ার গ্রিড করপোরেশন থেকে বলা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারার ওই গ্রিডে দুটি লাইন রয়েছে। একটি ট্রিপ করলেও অন্য লাইনটি চালু থাকে। এছাড়া দ্বিতীয় লাইনটিতে সবসময় চার্জ দেয়া থাকে। তাই বাংলাদেশে ওই দিন এক মুহূর্তের জন্যও বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকেনি। তাহলে বাংলাদেশে জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় কেন?

 

গঠিত তদন্ত দল শনিবারের বিদ্যুত বিপর্যয়ের মূল কারণ শনাক্ত করতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। দেশবাসী এ ধরনের বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি দেখতে চায় না। দেশে এমনিতেই চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি। বিতরণ ব্যবস্থাও সর্বস্তরে ত্রুটিমুক্ত নয়। বিদ্যুত বিভাগকে অনিয়ম দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। জাতীয় গ্রিড বিপর্যয় রোধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। বিদ্যুত জনজীবনেই শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় উন্নয়নেও এখন অপরিহর্য অংশ। যেহেতু উন্নয়নের অন্যতম প্রথম শর্ত বিদ্যুত, সেহেতু উৎপাদন ও বিতরণ যুগোপযোগী করার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বের দাবি রাখে।