বিদেশে চিকিৎসা নিতে গিয়ে রোগীর মৃত্যু এবং

 

গাজীপুরের মধ্যবয়সী এক দম্পতির এক সন্তান ক্যান্সার আক্রান্ত। সন্তানকে সুস্থ করার জন্য দেশের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে ঘুরে শেষ পর্যন্ত ভারতে নিয়ে যান তারা। সন্তান মারা গেলে মৃতদেহ দেশে নেয়ার জন্য যশোর বেনাপোল সীমান্তের বিপরীত পেট্রাপোলে নেয়া হয়। পাসপোটর্টে গেলেও মারা যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সীমান্তে না আসার কারণে সুহালে পার হতে পারেননি। ছেলের লাশ নিয়ে অনিশ্চয়তার মাঝে পিতাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে নিকটস্থ বনগাঁও হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। এরপর? সন্তান ও স্বামীর লাশ নিয়ে আসমা খাতুন পড়েন ভয়াবহ এক সঙ্কটে। ঘটনাটি ঘটে গত  সোমবার। অবশেষে স্বামীর লাশ রেখে আসমা খাতুন তার ছেলের লাশ নিয়ে গাজীপুরে ফিরতে পেরেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। চিত্রটা ভাবলেই তো গা শিউরে ওঠে।

আসমা খাতুন ও রফিক দম্পতির ছেলে আসাদকে কেন দেশে সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা যায়নি, তাকে কেন দেশের বাইরে প্রতিবেশী দেশে চিকিৎসা করাতে নিতে হলো? আর কতেদিন আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা আস্থা অর্জন করতে পারবে? এরকম বহু সঙ্গত প্রশ্নে আছে, জবাব মেলে না বলেই হয়রানির শেষ থাকে না। যে আসমা ও তার স্বামী রফিক তাদের সন্তান আসাদকে ভারতে নিয়ে গেছেন তারা নিশ্চয় শখ করে যাননি। দেশে সুচিকিৎসার নিশ্চয়তা থাকলে এবং চিকিৎসার ওপর আস্থা থাকলে নিশ্চয় তাদের নিশ্ব হতে হতো না। চিকিৎসা পাওয়া আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। খাতা কলমে সেই অধিকার বাস্তবায়নে ঘাটতি না থাকলেও বহু আসাদকে যে এভাবে ঝরে যেতে হচ্ছে, বহু আসমা-রফিক দম্পতিকে সর্বস্ব বিকিয়ে পাওয়া অর্থ বিদেশে চিকিৎসার জন্য ব্যয় করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। অথচ আমাদের দেশীয় চিকিৎসার ওপর আস্থা অর্জনে নূন্যতম উদ্যোগ নিচ্ছি না, উপরোন্ত পদস্থ কর্তা ও রাজনীতিক চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলে তা ফলও করে প্রচার করা হচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে কিছুটা হলেও যে, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা আস্থাহীন হচ্ছে তা বোদ্ধাদের বুঝতে বেগ পেতে হয় না। সিঙ্গাপুরের মতো দেশের মতোই আমাদের দেশে চ্যালেঞ্জ করে ওপেন হার্টসার্জারি হয় এখন, তারপরও আস্থা রাখতে না পরা অর্থশালী বা ক্ষমতাবানদের ছুটতে দেখা যায় দূরদেশে। এটা শুধু রেওয়াজই নয়, আস্থাহীনতারই কুফল। বিদেশে চিকিৎসা মানে দেশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ।

দেশে সব চিকিৎসা উন্নত হবে, সব অধিকার শতভাগ বাস্তবায়ন হবে এরকম আশা করা এখনও অবান্তর। তারপরও যে রোগের চিকিৎসা পূর্বে অসম্ভব ছিলো এখন সম্ভব হয়েছে। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান যে চিকিৎসা সহজতর করেছে সেই চিকিৎসাগুলো অবশ্যই আমাদের দেশে মানসম্পন্ন ও সবার জন্য সহজতর করা সরকারেরই দায়িত্ব। তাছাড়া যেসব কারণে আমাদের দেশের চিকিৎসার ওপর আস্থাহীনতা সৃস্টি হয়েছে, হচ্ছে, সেসব কারণগুলো শনাক্ত করে দ্রুত সুধরে নেয়ার কর্মসূচি হাতে নেয়া দরকার। একই সাথে দেশের বাইরে গেলে কেও মারা গেলে মৃতদেহ দেশে নিতে হলে যে নিয়মগুলো আছে তাও আগেভাগেই জানানো এবং জানা উচিত। ভারতে কোনো রোগী মারা গেলে তার লাশ দেশে নিতে হলে প্রথমে দেশের হাই বা ডেপুটি কমশিনারের এনওসসি ও পরে রিজিওনার রেজিস্ট্রেশন অফিসারের ছাড়পত্র নিতে হয়।