বিজিবি সদস্যকে দেশে ফেরানোর কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন

 

বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাক পিতা হয়েছেন। যখন পিতা হলেন তখন তিনি মিয়ানমার বর্ডারগার্ড পুলিশের (বিজিপি) হাতে বন্দী। গত বুধবার নৌকায় নাফ নদীতে টহল দেয়ার সময় বিজিপি সদস্যরা হঠাৎ করে তাদের ওপর গুলি করলে বিপ্লব কুমার নামের এক বিজিবি সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। এরপর বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাককে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। অপহৃত হওয়ার পাঁচ দিন পার হওয়ার পরও ফেরত না পাওয়া কিংবা উদ্ধার করতে না পারার ঘটনাটি শুধু উদ্বেগজনকই নয়, পড়শি দেশের সাথে সম্পর্কের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ।

বিজিবির স্থানীয় কমান্ডার দাবি করেছেন, আবদুর রাজ্জাক সুস্থ আছেন এবং কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর দেশে ফেরত আসবেন। এ বক্তব্যে আশ্বস্ত হওয়ার সময় ইতোমধ্যেই পার। এরই মাঝে মিয়ানমারে বাংলাদেশ মিশনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে বিজিবি নায়েক রাজ্জাককে দেশে ফেরত দেয়ার দাবি জানালে সে দেশে বিচারের পর তাকে ফেরত দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন। গতকাল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে এরকমই তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি দুঃখজনক। কেননা, এ ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দু দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে পতাকা বৈঠক করা হয়। কিন্তু বিজিবির পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও প্রতিপক্ষ নানা অজুহাতে কালবিলম্ব করেছে। এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বাংলাদেশের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। যদিও ঘটনার পরপরই আমাদের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কিছু ভুল বোঝাবুঝির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। তাই যদি হবে, তা হলে বিজিবি নায়েক আব্দুর রাজ্জাকের দেশে ফেরা অনিশ্চয়তার মধ্যে কেন?

সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, কেন বিজিবি টহল নৌকায় বিজিপি সদস্যরা হামলা চালালো? কেনইবা একজন সদস্যকে তারা জোর করে নিয়ে গেলো? ক’দিন আগে মিয়ানামার সীমান্তে জঙ্গি ডেরায় ভারত হামলা চালায়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে যদি বৈরি সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেটা তো ভারতের সাথে হওয়ার কথা। আমাদের সাথে নয়। ভারতের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক নতুন নয়! এছাড়া সম্প্রতি মানব পাচার নিয়ে মিয়ানমার সরকার যে কঠিন চাপের মুখে পড়েছে তাতেও সম্পর্কের সুতোয় টান পড়তে পারে বলে অনুমান। তাই বলে বাংলাদেশের একজন সীমান্তরক্ষীকে ধরে নিয়ে যা করা হচ্ছে তা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন নয় কি? যে কারণেই ভুল বোঝাবুঝি হোক, সীমান্তে যেমন গোলাগুলি কাম্য নয়, তেমনই এক দেশের সীমান্তরক্ষীকে প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষীরা ধরে নিয়ে আটকে রেখে তার হাতে হ্যান্ডকাপ পরানো ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারও সভ্যতা নয়। ধৃষ্টতা। আন্তর্জাতিক আইনেরও পরিপন্থি।

মিয়ানমারের মৌখিক আশ্বাসে ৫ দিন পার। এরপরও কি আস্থা রাখা যায়। তা ছাড়া মিয়ানমারে বাংলাদেশ মিশনের কর্মকর্তাকে যে কথা জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে তাতে সরকারের উচিত তড়িৎ কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। আবদুর রাজ্জাককে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কূটনৈতিক ও সীমান্তরক্ষী পর্যায়ে সবকিছু করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত জাতিসংঘের শরণাপন্ন হওয়ার বিষয়টিও ভাবতে হবে। আব্দুর রাজ্জাকের ঘরে আসা নবজাতকের প্রতিও সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্তাদের বিশেষ নজর রাখা প্রয়োজন।