বিকৃত রুচির বহির্প্রকাশ : অন্যের মর্যাদায় আঘাত

মত প্রকাশের স্বাধীনতা সকলেরই আছে। সেই স্বাধীনতার পরিধি অতোটুকুই, যতোটুকু হলে অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ তথা খর্ব হয় না। ব্যাঙ্গ কার্টুন? তারও রুচিশীল সৃষ্টিশীলতা তথা ইতিবাচক বাচনভঙ্গি অনিবার্য। যা অন্যের ত্রুটি সুধরে নেয়ার এবং সমাজকে সুন্দর পথে নিতে সহায়ক হয়। আর তা যদি শুধুই অন্যকে বা অপছন্দের মানুষকে খাটো করার জন্যই করা হয়, সেটা সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এরকম কিছুকে আর যাই হোক মত প্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা বলা চলে না।

দর্শনার এক যুবক ব্যাঙ্গ কার্টুন প্রস্তুত করে তা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে চরম বিতর্কিত হয়েছে। বিরূপ সমালোচনার মুখে গ্রেফতারও হয়েছে। পুলিশ অবশ্য বলেছে, তাকে নাশকতা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। ছবি ব্যাঙ্গ বা বিকৃত কার্টুনের বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, অনির্বাণ থিয়েটার ঐতিহ্যবাহী একটি সংগঠন। প্রগতিশীল সমাজ গঠনে এ সংগঠনটির দীর্ঘ পথচলা। কর্মকাণ্ডে দর্শনার মধ্যে সীমিত না রেখে পাখা মেলেছে সারাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনে। এ সংগঠনের বিবেচনায় দুজন গুণী ব্যক্তিকে সংবর্ধিত করা হয়েছে। সম্মাননা দেয়া হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনির্বাণ থিয়েটারের এবারের একুশে মেলায় যে দুজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয় সে দুজনের ছবি ব্যাঙ্গ করে আপত্তিকরভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হলে সুধীমহলে বিরূপ সমালোচনার ঝড় ওঠে। যে ব্যক্তি আপত্তিকর কাজটি করেছে তার আর যাদেরকে সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে তাদের সামাজিক অবস্থানগত যতো ফাঁরাকই থাক, সমপর্যায়ে হলেও যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে তাকে সুস্থ ধারার সমালোচক বলা চলে না। নিন্দুক? না, নিন্দার মতো করেও কার্টুন হয়নি, যা হয়েছে তা বিকৃত রুচির বহির্প্রকাশ ঘটনার মধ্যদিয়ে অন্যের মর্যাদায় আঘাত।

রাতারাতি সমালোচিত হওয়ার জন্য কেউ নিজেই যদি বিবস্ত্র হয়ে রাস্তায় নামেন, তার মধ্যে যে যে রুচির বহির্প্রকাশ ঘটে, অন্যের ছবি বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে পরিচিত পাওয়ার পাঁয়তারার মধ্যে সেই একই রুচির পরিচয় মেলে। এ ধরনের বিকৃত মানসিকতা পরিহারে অবশ্যই দরকার উচিত শিক্ষা। একজন পার পেয়ে গেলে অভিন্ন অপরাধ প্রবণতা চক্রবৃদ্ধি হারে ছড়াবে। গুণীর মর্যাদা দেয়ার মতো না হলেও নিজেকে রুচিশীল করে গড়ে তোলা উচিত।