বাল্যবিয়ে রোধে গড়ে উঠুক সামাজিক আন্দোলন

 

‘কষ্টটা বুঝলো না কেউ, চলে গেলো কিশোরী বধূ মিনি খাতুন’ গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটি অবশ্যই অভিভাবক মহলকে কিছুটা হলেও নাড়া দিয়েছে। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রীর যে সম্পর্ক তার মধ্যে বড় মধূর মুহূর্তটাই সব চেয়ে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় যদি বাল্যবিয়ে দেয়া হয়। উত্ত্যক্তকারীদের উৎপাত, নাবালিকা মেয়েকে সুপথে রাখতে পারার ঝুঁকি, সুপাত্র আবার পাবো কি-না তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েই মূলত অভিভাবকদের অনেকেই কিশোরী কন্যাকে বিয়ের আসনে বসাতে বাধ্য করছে।

 

বাল্যবিয়ে মানে ছেলে-মেয়ের শুধু সর্বনাশ করাই নয়, জাতির ভবিষ্যতও ক্ষতিগ্রস্ত করা। কারণ অপূর্ণ বয়সে দম্পতির সন্তান অধিকাংশ সময়ই জাতির ঘাড়ের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়।   নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, দেশে বাল্যবিয়ে রোধে সরকারি বেসরকারিভাবে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। প্রচলিত আইন প্রয়োগেও প্রশাসনের বাড়তি উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই মেহেরপুর জেলাকে বাল্য বিয়েমুক্ত ঘোষণা করে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম ঘোষণাদানকারী জেলা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিয়েছে। যদিও ঘোষণা যদি শুধু খাতা-কলমে হয় তা হলে ইতিহাসের পাতায় তা ইতিবাচকের বদলে নেতিবাচক মন্তব্যের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। মেহেরপুর জেলাকে বাল্য বিয়েমুক্ত ঘোষণার পর চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার সকল কাজি সম্মিলিতভাবে প্রতিজ্ঞা করে বলেছেন, তারা আর বাল্য বিয়ে পড়াবেন না। বাল্যবিয়ে রোধে এসব উদ্যোগ অবশ্যই অনুকরণীয়। অবশ্যই বাল্যবিয়ে রোধে জন্মসনদ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তা প্রদানের বিষয়ে ইউনিয়ন ও পৌরসভার দায়িত্বশীলেরা ভোটের লোভে অনিয়মের সাথে আপস করলে অঙ্গীকার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি পদে পদে। কারণ, কাজি বিয়ে পড়াবেন জন্মসনদ দেখে। ১৩ বছরের কিশোরীর যদি জন্ম সনদ ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার মতো করে জন্ম তারিখ লেখা হয়, তা হলে কাজির আর কী করার? তিনি তো সেখানে বাড়তি উপঢৌকনও পাচ্ছেন। সে কারণে যেমন দরকার জন্ম সনদ প্রদানে দুর্নীতি-অনিয়ম রোধ, তেমনই প্রয়োজন অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার আলো ছড়ানোর বাড়তি উদ্যোগ। স্কুল-কলেজের রাস্তা বখাটে মুক্ত করা।

 

বিতর্কটা বহুদিন ধরেই আছে, মেয়েরা কতোটা বয়সে বিয়ের উপযোগী হয়?  প্রিয়ড সে যে বয়সেই পাক না কেন, বিয়ে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক সুন্দর করার পূর্ণতা না পেলেও প্রাথমিকভাবে পূর্ণবয়স হিসেবে ১৮ বছর ধরা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। যদিও মাঝে মাঝে বিয়ের বয়স ১৬ করার ক্ষতির ঝোঁক ওঠে। অভিভাবককেই তার সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। বিগত দিনের ক্ষতিকর প্রবণতা পরিহারে সচেতনতার আলো ছড়াতে হবে। এ দায়িত্ব অবশ্যই সমাজের সচেতনদেরই। বাল্যবিয়ে রোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা খুবই জরুরি।