বাল্যবিয়ের দায়ে দণ্ড এবং বখাটের উৎপাতে আত্মহত্যা

 

খবর দুটোর কোনটিকেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। দুটি খবরের একটির শিরোনাম ছিলো- ‘নাবলিকা কন্যাকে বিয়ের আসনে বসানোর দায়ে বাবার কারাদণ্ড’ অপরটি হলো-‘বখাটের উত্ত্যক্ত সহ্য করতে না পেরে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যা।’ পৃথক ঘটনা দুটির ধরণ-বরণ আলাদা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্পূরক। দায়িত্বশীলরাও বোধকরি তা অস্বীকার করতে পারবেন না।

অবশ্যই অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে দেয়া মানে নিজের সন্তানকে নিজের হাতে চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া। মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া বললে ভুল বলা হয় না। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ের পরিণাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘হয় দাম্পত্য বিচ্ছেদ, নয় অপমৃত্যু’। এরপরও কেন বাল্যবিয়ে? শুধু অসচেতনতাই যে দায়ী তা নয়, বিরাজমান সমাজিক নানা সমস্যার কারণে অনেক সচেতন অভিভাবকও কন্যাকে বাল্যবিয়ের আসনে বসাতে বর খোঁজেন। জন্মসনদ জাল করতেও দ্বিধা করেন না। যদিও এসব দণ্ডনীয় অপরাধ। দণ্ড এড়াতে তাদের সিংহভাগই গোপনীয়তা রক্ষা করেন। অর্থলিপ্সু কাজি দিব্যি বিয়ে পড়িয়ে পাতপেড়ে খেয়ে খিলানি হাতে নিয়ে বাড়ির পথ মাপেন। অবশ্য গণহারে এ রেওয়াজে কয়েক বছর ধরে অনেকটাই ছেদ পড়েছে। কারণ আইন প্রয়োগে প্রশাসন সরকারের নিদের্শনায় বেশ সোচ্চার। বখাটে রুখতেও। অথচ বাড়ির বসার ও শোয়ার ঘরে রাখা বৈদ্যুতিক বাক্সের মাধ্যমে ঢুকে পড়া ‘হান্ডেড পার্সেন্ট লাভ…’ মার্কা সচিত্র গান বন্ধের তেমন উদ্যোগ বরাবরই অনুপস্থিত।

কোনোভাবেই বাল্যবিয়েকে যেমন সমর্থন করা যায় না, তেমনই স্কুল-কলেজ বা প্রাইভেট টিউটরের পথে উত্ত্যক্তকারীর উৎপাত মেনে নেয়া যায় না। যে উত্ত্যক্তকারীর উৎপাতে অতিষ্ঠ মাগুরার কলেজছাত্রীকে আত্মহত্যা করতে হয়েছে, সেই বখাটের উপযুক্ত শাস্তি যেমন অনিবার্য, তেমনই বখাটেরাও যে সমাজেরই কারো না কারো সন্তান তাও উপলব্ধিতে নিয়ে তাদের সুপথে রাখার মতো বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রজন্মকে সুনাগরিক করে তুলতে হলে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিকে ঝুকলে চলে না, পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে কোনো কোনো পরিবার পারিবারিকভাবেই প্রজন্মকে সুনাগরিক করে গড়ে তোলার চেষ্টায় সচেতন থাকলেও সামাজিক ও তথ্যপ্রযুক্তির বেসামাল ঢেউ তছনছ করে দিচ্ছে। কেননা দেশি যুগোপযোগী সংস্কৃতি চর্চায় শূন্যতা পূরণ করছে অপসংস্কৃতি। স্টার জলসা তার উৎকৃষ্ট অন্যতম উদাহরণ। কি শেখায় ওইসব চ্যানেলের চটকদারি অভিনয় শৈলীর নাটকে? দেশীয় চ্যানেলগুলো? বিজ্ঞাপনে বিমুখ দর্শকস্রোতা।

বাল্যবিয়ে রুখতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা ছড়ানোর নানামুখি কর্মসূচি হাতে নেয়া দরকার। জন্মসনদ জাল করার কাজে যারা সিদ্ধহস্ত তাদের উপযুক্ত শাস্তি যেমন নিশ্চিত করা প্রয়োজন তেমনই প্রয়োজন অর্থলিপ্সু কাজির উচিত শিক্ষা। বখাটের উৎপাত বন্ধে সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চাসহ সামাজিক পারিবারিক সচেতনতামূলক নানামুখি কর্মসূচি হাতে নেয়া জরুরি।