বাংলাদেশ ফুটবল দলের ধারাবাহিক হার এবং

                এইতো সেদিনও অর্থাৎ চলমান শতকের শুরুতেও ফুটবল ছিলো জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। গত শতকের আশি-নব্বইয়ের দশকে ঘরোয়া ফুটবল লীগে আবাহনী-মোহামেডানের জনপ্রিয়তা যেমন ছিলো ঈর্ষণীয় তেমনই শীর্ষ খেলোয়াড়দের নিয়েই গঠন করা হতো জাতীয় দল। তাতে চুয়াডাঙ্গার অবস্থানও ছিলো মজবুত।

               ক্লাব-ফুটবলের জনপ্রিয়তা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো যে, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ভক্তদের তুমুল উন্মাদনা লক্ষ্য করা যেতো। ফুটবলের সেই সোনালী দিনগুলো সত্যিই ফুটবলপ্রেমীদের কাছে স্মৃতি হয়েই মাঝে মাঝে উঁকিঝুঁকি দেয়। আর কৃতী খেলোয়াড়দের? তাদের কারো কারো ঠাঁই কোনো কোনো ক্লাবের কোচ হিসেবে হলেও অধিকাংশেরই কাটে অলস সময়। এর মাঝে চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার নাগদহ অনির্বান আয়োজিত আফাজ উদ্দিন স্মৃতি টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত খেলায় টানা টান উত্তেজনা আর দর্শকের ভিড় কিছুটা হলেও ফুটবলপ্রেমীদের উৎফুল্ল করেছে। যদিও জেলা পর্যায়ে তেমন আয়োজনের বড্ড অভাব।

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, বাংলাদেশে ফুটবল আর ক্রিকেটের গ্রাফ পাশাপাশি তুলনা করলে দেখা যাবে ফুটবল যখন মহীরুহ, ক্রিকেট তখন নিতান্তই চারাগাছ। সেই ফুটবলই মূলত এখন বনসাঁই। গত সোমবার সন্ধ্যায় ভুটানের থিম্পুতে রচিত হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবলের শোকগাঁথা। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফের ফিরতি ম্যাচে ভুটানের কাছে ৩-১ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ। দুশ্চিন্তার কথা হলো, পুরো ম্যাচে এমনই প্রভাব বিস্তার করে ভুটান, যা দেখে মনে হতেই পারে বাংলাদেশ যেন ফুটবল খেলা পারেই না। এই দশা কেন? কেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের এমন হতশ্রী অবস্থা? কোচ টম সেন্টফিট বলেছেন, তার পরামর্শে নাকি কান দেন না বাংলাদেশের ফুটবলাররা।

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে আট ম্যাচে ৩২ গোল খেয়েছে বাংলাদেশ, জর্ডানে গিয়ে খেয়েছে আট গোল, আফগানিস্তানের নিকট সাফ ফুটবলে চার গোল, বিশ্বকাপ বাছাইয়ে তাজিকদের মাঠে পাঁচ গোল, কিছুদিন আগে মালদ্বীপের নিকটও লজ্জাজনক পরাজয় বরণ করতে হয় বাংলাদেশ দলকে। ব্যর্থতার ধারাবাহিকতার ভেতর দিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল ক্রমশ অন্ধকার সুড়ঙ্গে পতিত অর্থাৎ পতনের তলানিতে। অবশ্যই ফুটবলে রাতারাতি সমস্যা দানা বাঁধেনি। নৃতাত্ত্বিকভাবেই এ সমস্যাটি মেনে নিয়েই ফুটবলের ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

               যোগ্যদের খুঁজে নিয়ে কৃতী ফুটবলারদের নিয়েই গঠন করতে হবে জাতীয় দল। নিয়মিত তৃণমূল ও ক্লাব পর্যায়ের লীগ এবং কঠোর অনুশীলন ব্যতীত ভালো ফল সুদূরপরাহতই থাকবে। শুধু ফুটবল নয়, সর্বক্ষেত্রেই পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই গৌরবজনক অবস্থানে উন্নীত করা সম্ভব।