বাংলাদেশ দলের বিশাল জয় : অভিবাদন

তামিমের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা শেষ পর্যন্ত জয়ের নোঙ্গরে পৌঁছুতে বেশি বেগ পেতে হলো না। মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ৩৮ ওভার ১ বোল খেলে সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ দল। পাকিস্তান প্রথম ম্যাচে ৭৯ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ উইকেট হেরে সিরিজ থেকে সিটকে পড়লো। পাকিস্তানকে ষোলোবছর আগেও হারানো হয়, তবে তারপর এবার সিরিজ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ দল মোটেই সময় না নিলেও তাদের জয়ের ধারায় ফিরতে মাঝে বহু দিন যে লেগে গেছে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না।

           এক ম্যাচ বাকি থাকতেই টাইগারদের সিরিজ জয় সারা বাংলাদেশকে শুধু উল্লসিতই করেনি, এবারের ক্রিকেটের বিশ্বআসরে তাদের খেলা দেখে আগামীতে বিশ্বকাপ জয়ের যে অনেকটা সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে তা ক্রিকেট বোদ্ধাদের মুখ থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে। গতকাল রোববার পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে এই প্রথম কোনো সিরিজ জিতলো তারা। আগামী বুধবার হবে চলমান সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে। সফররত পাকিস্তানি ক্রিকেট দলকে প্রথম ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে-ফিল্ডিঙে শ্রেয়তর দল হিসেবে তারা সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে হারিয়ে দিল ৭৯ রানের ব্যবধানে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বহু বল ও ইউকেট হাতে থাকতেই হেসে খেলে বাংলাদেশ দল জয়লাভ করেছে। খেলার মাঠে উপচেপড়া দর্শকের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি শুধু ক্রিকেটমোদীদেরই নয়, দেশবাসীকেই উৎসাহিত করেছে। খেলা শেষের সাথে সাথে হাস্যোজ্জ্বল মুখে করতালি দিয়ে এবং জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানান তিনি। তিনি বলেছেন, বিশ্বে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশের ক্রিকেট।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দল প্রথম জয় পেয়েছিলো ১৬ বছর আগে। বাংলাদেশ যখন আইসিসির সহযোগী সদস্য সে সময়ে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে চমক দেখালেও টাইগাররা যেন জয়ে ফিরতেই পারছিলো না। ১৬ বছর ধরে একনাগাড়ে পাকিস্তানের কাছে টাইগারদের শুধু হার মানতে হয়েছে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের সামনে ৩২৭ রানের পাহাড় তুলেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সেদিক থেকে শুক্রবার ও রোববার টাইগাররা এক ভিন্ন ইতিহাসের সূচনা করেছে। সিরিজের প্রথম খেলায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টাইগাররা করেছে তাদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান। একই খেলায় দুটি সেঞ্চুরি করারও কৃতিত্ব দেখিয়েছে সাকিববাহিনী। সিরিজ নিশ্চিত করার খেলায় এতো বল হাতে থাকতে ও ৭ উইকেটের জয়ও ইতিহাস। এ জয়ের আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে। অবশ্যই এ আনন্দ দেশপ্রেমি সকলের। দলমত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জয়ের উল্লাস সবার মাঝে। কানে বাজে ঐক্যেরই আহ্বান।

এবারের বিশ্বকাপে উজ্জীবিত দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে টাইগাররা। সে ধারাবাহিকতা শুধু ধরেই রাখেনি, পর পর দুটি খেলায় টাইগাররা সফররত পাকিস্তানকে বুঝিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বে আমরাও শক্তিধর। স্মর্তব্য, দুই দলের একটি মাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও পাকিস্তান দল হেরেছে বিসিবি একাদশের কাছে। বাংলাদেশ দলের এ বিশাল জয়কে অভিবাদন। বিশ্বকাপে উজ্জীবতা, পাকিস্তানের বিরদ্ধে সিরিজ জয়ে নিজেদের ওপর আস্থা রাখার যে সাহস অর্জিত হয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, অর্জন অক্ষুণ্ণ রাখতে দরকার আরো প্রত্যয়, আরো চর্চা।