বজ্রপাতে একের পর এক মৃত্যু এবং

 

বজ্রপাত আগেও হতো, এখনও হয়। আগে অতো মৃত্যুর খবর পাওয়া যেতো না। এখন বজ্রসহ বৃষ্টি মানেই যেন মৃত্যুর সংবাদ। কেন? বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি উঁচু গাছ নিধনকে দায়ী করেন অনেকে। মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবও বজ্রপাতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ।

বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বজ্রঝড় হয়ে থাকে, যাকে কালবোশেখি ঝড় বলা হয়। তবে এ ঝড় কখনও কখনও অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে এবং বর্ষাকালেও হয়ে থাকে। বজ্রপাত হয় কিউমুলোনিম্বাস নামে খাড়াভাবে সৃষ্টি হওয়া বিশাল আকৃতির পরিচলন মেঘ থেকে। এ মেঘ থেকে শুধু বজ্রপাত নয়, ভারি বর্ষণ, শিলাবৃষ্টি, দমকা/ঝড়ো হাওয়া, এমনকি টনের্ডোও হতে পারে। সাধারণ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বহুলাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। যেমন, যে সময় বজ্রপাত হয় তখন আকাশে কালো মেঘ দেখা যায়। বিদ্যুত চমকায়। আমরা জানি, আলোর গতি শব্দের গতির চেয়ে অনেক বেশি। বাতাসে শব্দের গতি ৩৪০ মি./সে., অন্যদিকে আলোর গতি প্রায় ৩ লাখ কি.মি./সে.। তাই বিদ্যুত চমকানোর কিছু পরে বজ্রপাতের শব্দ শোনা যায়। বিদ্যুত চমকানো দেখার পর থেকে বজ্রপাতের শব্দ শোনা পর্যন্ত কতো সেকেন্ড হলো, তা হিসাব করে তাকে ৩ দিয়ে ভাগ করলে বজ্রমেঘটি কতো কিলোমিটার দূরে আছে তা বের করা যায়। যদি ১০ কিলোমিটার দূরে বিদ্যুত চমকায় তাহলে তৎক্ষণাৎ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। কারণ পরবর্তী বজ্রপাত প্রথমটা থেকে ১০ কিলোমিটারের মধ্যেই হতে পারে, অর্থাৎ প্রথমটা যদি ১০ কিলোমিটার দূরে থাকে, তবে দ্বিতীয়টা ওপর আঘাত হানতে পারে। তবে এসব হিসাব-নিকাশ করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।

বজ্রপাত হলো উঁচ্চক্ষমতার বৈদ্যুতিক শক্তি। ওই শক্তি যার মাধ্যমে পৃথিবীতে মেলে, তা বিদ্যুতায়িত হয়। ঝলসানোর মতো কিছু ঝলসে যায়, পোড়ার মতো কিছুতে লেগ যেতে পারে আগুন। ফলে যখন আকাশে কালো মেঘ দেখা দেবে তখন ঘরের ভেতর আশ্রয় নিতে হবে। কারণ খোলা জায়গায় কোনো বিচ্ছিন্ন বস্তুর ওপর বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। প্রশ্ন হলো- মানুষ তো কর্ম উপলক্ষে দিনের বেলায় সাধারণত ঘরের বাইরে থাকে। তারা কী করবেন? এক্ষেত্রে ধারের কাছে কোনো আশ্রয়স্থল থাকলে সেখানেই আশ্রয় নিতে হবে। আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলে কৃষক ভাইয়েরা যারা ফসলের জমিতে কাজ করেন, তারাই বজ্রপাতের শিকার হন বেশি। তাদের উদ্দেশে পরামর্শ, ঝড়বৃষ্টি-বজ্রপাতের সময় কোনো উঁচু স্থানে অবস্থান নেয়া যাবে না। খোলা জায়গায় কোনো গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। গাছ থেকে কমপক্ষে ৪ মিটার দূরে থাকতে হবে। খোলা জায়গায় অথবা ফসলের জমিতে কাজ করা অবস্থায় আশ্রয়ের জায়গা না থাকলে যতোটা সম্ভব নিচু হয়ে গুটিশুটি মেরে বসে থাকতে হবে, গর্ত থাকলে তার ভেতরে বসে থাকা যেতে পার, তবে মাটিতে শোয়া যাবে না। যারা পুকুরে বা নদীতে মাছ ধরেন, বজ্রবৃষ্টির সময় তাদের মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে। জলাশয় থেকে দূরে থাকতে হবে। যারা নৌকায় থাকেন তাদের ছইয়ের নিচে আশ্রয় নিতে হবে। নৌকায় ছই না থাকলে নিচু হয়ে পাটাতনে যথাসম্ভব কম স্পর্শ করে অবস্থান নিতে হবে। বজ্রপাতের সময় কোনোক্রমেই নদী বা পুকুরে গোসল করা উচিত নয়। যারা ঘরের ভেতরে থাকবেন, তাদের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগগুলো লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে। জানালা ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরে থাকতে হবে। বারান্দায় অবস্থান করা উচিত নয়। ভবনে যথাযথ বজ্রনিরোধক দণ্ড ব্যবহার করতে হবে।

বজ্রপাতে গতপরশু চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার শিবনগরের দুই স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এদের একজনের পিতা গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন। গ্রামসংলগ্ন একটি বিলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও চলতি মরসুমে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুরে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। সকলের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা।