ফুটবলে বাংলাদেশের উদীয়মান সূর্যকে অভিবাদন

          সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের খেলায় শত কোটি মানুষের দেশ ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন শিরোপা অর্জন করেছে বাংলার কিশোররা। অনন্য এ জয়ের মধ্যদিয়ে তারা শুধু যে দেশবাসীকে আনন্দে ভাসিয়েছে তা নয়, ক্রিকেটের মতো ফুটবলের ধূসর অঙ্গনেও এনে দিয়েছে সোনালি ভবিষ্যতের হাতছানি। এর মাঝে ভুটানকে সহজেই হারিয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৬ আগস্টের ফিফার মানদণ্ডের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী বিশ্ব ফুটবলে ২০৯ সদস্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৭০তম। অন্যদিকে মাত্র দু-তিন দশক আগেও আমাদের দেশে ফুটবলের যে বিপুল জনপ্রিয়তা ছিলো- তাতে নানা কারণে ভাটার টান। ক্রিকেটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে ফুটবলে ভাটা বললে অবশ্যই ভুল বলা হবে। ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো বিশ্বফুটবলের পরাশক্তিগুলোর প্রতি বাংলাদেশের দর্শক-সমর্থকদের বিপুল আকর্ষণই প্রমাণ করে যে ফুটবলের প্রতি ভালোবাসায় এতোটুকু চিড় ধরেনি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের চেয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল দেশবাসীকে কতোটা মাতিয়ে তোলে তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। যদিও বিশ্বফুটবলে সার্কভুক্ত দেশগুলোর অবস্থানও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। শোনা যায়, ভারত সুদূরপ্রসারী কর্মসূচি হাতে নিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবলমাঠে শক্ত অবস্থানের জানান দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ব্রাজিলে বিশেষ প্রশিক্ষণশিবিরও রয়েছে নাকি তাদের। আমাদের? তেমন কর্মসূচি না থাকলেও আমাদের কিশোররা অন্তত এটুকু প্রমাণ করেছে যে তাদের মেধা ও সামর্থ্যের কোনো অভাব নেই। যথাযথ প্রণোদনা পেলে ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও তারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে বিশ্ব পরিসরে। প্রশ্ন হলো- সেই প্রণোদনা জোগানোর মতো সামর্থ্য আমাদের আছে কি-না। এটা অনস্বীকার্য যে ফুটবল শুধু নয়, সামগ্রিকভাবে ক্রীড়াক্ষেত্রে যারা ক্রমাগত সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে, প্রজন্মকে উৎসাহিত করছে- তাদের পেছনে রয়েছে বিপুল বিনিয়োগ এবং অব্যাহত পরিচর্যা। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো একটি প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে খেলোয়াড়দের পেছনে কিছু অর্থ ও সময় ব্যয় করে সাময়িক সুফল পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে তা ধরে রাখা যায় না। সম্ভব নয়। এমনকি এক-দুটি প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার পর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে খেলোয়াড়দের নানাভাবে পুরস্কৃত করার যে উচ্ছ্বাস দেখা যায়- তার কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

অবশ্যই তীব্র প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে অবকাঠামোগত তথা প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য উন্নয়নের বিকল্প নেই। সেটি হতে হবে বিশ্বমানের। পাশাপাশি, গুরুত্বারোপ করতে হবে অব্যাহত প্রশিক্ষণের ওপর। এ জন্য বিশ্বমানের প্রশিক্ষক যেমন দরকার, তেমনি দরকার যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক প্রণোদনাও। ফুটবলে বাংলাদেশের উদীয়মান সূর্যকে অভিবাদন। ১৬’র পর এবার ১৯’র সাফল্য দেখার প্রত্যাশায় দেশবাসী।